শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০ ২৪
শেখ আব্দুল মজিদ::
৫ এপ্রিল ২০ ২২
৪:৪৫ অপরাহ্ণ

সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইভটিজিং এর স্বিকার হচ্ছেন নারীরা

শেখ আব্দুল মজিদ:: সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিয়ত ইভটিজিং এর স্বিকার হচ্ছেন নারীরা। চলাচলের রাস্তাও অনিরাপদ হয়ে উঠছে নারীদের জন্য। সিলেট বিভাগ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহনে, অফিস, রাস্তায় চলাচলরত নারীরা প্রতিনিয়ত নানা রকম ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। ভোগান্তি মাঝে মাঝে তাদের কাছে হয়রানি এমনকি মাঝে মাঝে প্রাণনাশের আশংকায় পরিণত হয়েছে।

ভুক্তভোগী হওয়া এইসব নারীরা না পাচ্ছেন আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য না পাচ্ছেন ভিকটিম হয়ে প্রসাশনের দায়িত্বশীল আচরণ। গণপরিবহনে ইভটিজিং এর বেশির ভাগই ঘটছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। শনিবার (০২ এপ্রিল) ঢাকার একজন শিক্ষিকা থানায় অভিযোগ দিয়ে বলছেন, কপালে টিপ পরার কারণে পুলিশের একজন সদস্য তাকে হেনস্তা করেছেন। তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দার অভিযোগ করেছেন, শনিবার সকালে কর্মস্থলের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় পুলিশের পোশাক পরা একজন ব্যক্তি তাকে 'টিপ পরছোস কেন' বলে কটুক্তি করেন।

সেই সময় তিনি প্রতিবাদ জানালে তার গায়ের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন পুলিশের পোশাক করা ওই ব্যক্তি। শনিবার সকালে ওই ঘটনা ঘটলেও তিনি রোববার শেরে বাংলা নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ঐ নারি। রোববার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য সুর্বণা মোস্তফা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ''বাংলাদেশের কোন সংবিধানে কোন আইনে লেখা আছে যে, একজন নারী টিপ পরতে পারবে না।

এটি অত্যন্ত ঘৃণিত একটি ঘটনা।'' এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমেও তীব্র আলোড়ন তৈরি করেছে। অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের টিপ পরা ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছেন। এর আগেও মধ্যরাতে সিএনজি আটকে নারীদের হয়রানি করা, বিনা অনুমতিতে ভিডিও করে পোস্ট করার একাধিক অভিযোগ উঠেছিল পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে, যেসব ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।

শুধ তাই নয়, যাত্রীসহ পরিবহনের চালক, স্টাফ কিংবা হেল্পার দ্বারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়েও নিরবে রাস্তায় চলাচল করছে এসব নারী যাত্রীরা। ফলে রাস্তা চলাচলে দুর্ঘটনা, ছিনতাই কিংবা বেশি ভাড়া নিয়ে তারা যতটা না চিন্তা করেন তার চেয়ে সবার আগে মাথায় এই চিন্তা আসে যে নিজের সতীত্ব (সন্মান) নিয়ে বাসায় ফিরতে পারব কি না? দিন দিন গণপরিবহন রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে তাদের কাছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্ন সন্ধ্যা ৭টার দিকে শান্তিনগর থেকে তরঙ্গ প্লাস বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন।

শুরু থেকেই বাসের হেলপার স্টুডেন্ট ভাড়া নিয়ে ঝামেলা শুরু করে। প্রতি চেক পোস্টে স্টুডেন্ট হিসেবে হাত তুলে চেকারকে আইডি কার্ড দেখানোর চেষ্টা করে রাফিয়া। চেকারকে আইডি কার্ড দেখানোর চেষ্টা করছে দেখে ওই হেলপার তার উদ্দেশে নানা ধরনের মন্তব্য করতে থাকে। বাস থেকে নেমে যাওয়ার আগে রাফিয়াকে সেই হেলফার হুমকি দিয়ে বলে পরেরবার এই বাসে উঠলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে। হুমকি দেওয়ার পর বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হেলপারকে থাপ্পড় দেন রাফিয়া।

তখন হেলফার তাকে ধাক্কা দিয়ে বাসের ভেতর ফেলে দিয়ে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাফিয়ার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে, হাত কেটে যায় ও শরীরের নানা স্থানে আঘাত লাগে৷ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে উত্তরাগামী 'আকাশ পরিবহন' এর (ঢাকা মেট্রো- ব ১৩-০৪৩৯) বাসটি থামে। বাস থেকে নামার সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মনিকা নামের এক শিক্ষার্থীকে বাসের হেল্পার বাজেভাবে স্পর্শ করে এবং অশ্লীল ভাষায় সম্বোধন করে, যা পাশের গাড়িতে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী শুনতে পান।

পরে পুলিশের সহায়তায় উত্তরা আজমপুর সিগনালে বাসটিকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত হেল্পার দোষ স্বীকার করে মাফ চাইতে থাকলে ভুক্তভোগী মনিকা মামলা না করায় পুলিশ তাকে মুছলেখা নিয়ে কড়াভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়। গণপরিবহনে ভুক্তভোগী নারীরা বলছেন, যত দিন যাচ্ছে পরিবহনে চলাচল নারীদের জন্য অস্বস্তি বেড়ে যাচ্ছে। সহ যাত্রীদের সাথে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠা, গায়ের সাথে ধাক্কা লাগা, হেলপাররা ওঠার সময় পিঠে হাত দেওয়ার চেষ্টা করা, বাসভর্তি মানুষ থাকলেও দাঁড়িয়ে যাওয়া। কাজ শেষ করে বাস পাওয়া খুব ঝামেলা।

নারীদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ বাসের সংখ্যা কম। ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বিশেষ বাস পাওয়া যায় না। ফলে সাধারণ বাসেই যাতায়াত করতে হয়। বাসে যাওয়ার সময় কোনও নারীর সাথে বাজে কিছু হলে আশেপাশের যাত্রীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সেভাবে কেউ এগিয়ে আসে না তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করবার জন্য। নারীদের জন্য আলাদা কোনও সংরক্ষিত আসন লেগুনায় না থাকায় গায়ের সাথে গা লাগিয়ে অন্য যাত্রীর সাথে বসে যেতে হয়। অনেক সময় পাশের যাত্রী বাজেভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করে। শুধু গণপরিবহন নয় সর্ব ক্ষেত্রে নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। জেল ফাঁসি এগুলো দিয়ে কি হবে? এগুলো তো সমাধান না। পুরুষশাসিত সমাজ তাদের যে লোভ লালসা, তাদের ভিতর যে অসভ্য শালিনতা এসব তো মনে করেন আইন করে রোধ করা যাবে না। এসব নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে। একজন পুরুষ যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজেকে সংযত না করে এই জিনিসটা যে রাস্তায় যে বের হয়েছে সে আমার মা বা বোন আমি নিজেকে সংযত রাখব।তাহলে কিন্তু এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। একজন পুলিশ যদিও সে পুলিশ সে কিন্তু পুরুষ মানুষ। কাজেই এই পেশায় আসতে তাকেও পরিবার থেকে তৈরি হয়ে আসতে হবে যে ভিকটিম যারা তাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসবে তারা আমার মা বা তারা আমার বোন। তাকে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোন থেকে না দেখে মানুষ হিসেবে ট্রিট করা। বাস চালক হেলফার দের ভালো প্রশিক্ষণ দিতে হবে।তারা যেন এটা ভাবে যে, এখানে আমার কর্ম, এখানে যৌন হয়রানি করা যাবে না, ইফটিজিং করা যাবে না। সামাজিক সচেতনতা মূলক কর্মসূচি পালন করা দরকার যাতে চালক কিংবা হেলফার বুঝতে পারে আমি যৌন হয়রানি, ইভটিজিং করলে আমার শাস্তি হবে, আমার কর্ম চলে যাবে। এভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার মাধ্যমে গণপরিবহন নারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ