বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০ ২৪
স্টাফ রিপোর্ট::
১৮ অক্টোবর ২০ ২১
১১:৫০ অপরাহ্ণ

আজমিরিগঞ্জের জলসূখা ইউনিয়ন নির্বাচন
আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে ভূয়া তথ্য দিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ

দেশে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্টিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। গত রোববার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এই নির্বাচনে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলার জলসূখা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী ছিলেন মো. শাহজাহান মিয়া। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত জরীপে দল শাহজাহান মিয়াকেই মনোনয়ন দেয়। কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেন তিনি।

কথা ছিল রোববার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করবেন। এরই মধ্যে রাতের আধারে ঘটে যায় তুলকালাম কান্ড। তিনি নাকি নিজেকে বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করেছেন এরকম মিথ্যা ও ভূয়া তথ্য প্রচার করে শাহজাহান মিয়াকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান বিএনপি থেকে আগত রোকসানা আক্তার শিখা। এমন সংবাদ পেয়ে হতবাক হয়ে যান শাহজাহান মিয়াসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে আজমিরিগঞ্জে চলছে তুলকালাম কান্ড। টক অব দ্যা টাউন হিসেবে এখন সর্বত্র আলোচনা চলছে কি থেকে কি হয়ে গেল। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২ অক্টোবর জলসূখা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্টিত হয়।

শাখা সভাপতি সিরাজ মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শচীন্দ্র গোপের পরিচালনায় উক্ত সভায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদক বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। উক্ত পত্রের মন্তব্য কলামে উল্লেখ করা হয়, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রোকসানা আক্তার ২০১৪ ইং সনের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং তিনি বিএনপি থেকে আগত। অন্যদিকে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. শাহজাহান মিয়া ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং সাবেক যুবলীগ নেতা। একই সাথে শাজাহান মিয়া ৪ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। একইভাবে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদক বরাবরেও পত্র প্রেরণ করা হয় এবং একই মন্তব্য লিখে দেয়া হয়। এসব পত্রে আরেকজন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ফয়েজ মিয়ার মন্তব্য কলামে লিখা হয় তিনি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। ৪ অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন। এই পত্রে ও মন্তব্য কলামে অনুরুপভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. শাহজাহান মিয়া ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং সাবেক যুবলীগ নেতা। একই সাথে শাহজাহান মিয়া ৪ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

একইসাথে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রোকসানা আক্তার শিখা ২০১৪ ইং সনের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং তিনি বিএনপি থেকে আগত বলে উল্লেখ করা হয়। এমনকি শাহজাহান মিয়া দলীয় মনোনয়ন ফরমে এবং নিজের ব্যক্তিগত জীবন বৃত্তান্তের কোথাও নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করেননি। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট ফরম যার নং ২১৯৩ যাচাই করলে দেখা যায় শাহজাহান মিয়া নির্দিষ্ট ফি দিয়ে মনোনয়ন ফরম কেন্দ্রীয় অফিসে গত ৬ অক্টোবর জমা দিয়েছেন এবং এই ফরমে কোথাও তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করেননি। অথচ দু একটি সংবাদ মাধ্যমে শাহজাহান মিয়া নিজেকে বর্তমান চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন মর্মে ভূয়া ও ভিত্তিহীণ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া তার মানহানী ঘটে এরকম মিথ্যা তথ্য ও প্রচার করা হয়েছে। এমন সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে মো. শাজাহান মিয়া বলেন, আমি কখনো কোন কাগজেই নিজেকে চেয়ারম্যান দাবী করিনি। এখন যদি কেউ ভূয়া কাগজ তৈরী করে মিথ্যা সংবাদ ছাপায় এর দায়ভার আমি নেব কেন?। আমি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার মানুষকে জিজ্ঞেস করলে এবং আমার জীবন বৃত্তান্ত দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন আমি কোন আদর্শে বিশ্বাসী লোক। কাজেই আমার সম্পর্কে মিথ্যা সাফাই গেয়ে আমার জনপ্রিয়তা কমানো যাবেনা। আমি বিশ্বাস করি দলের জন্য কাজ করলে দল আমাকে আজ না হোক কাল মূল্যায়ন করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জলসূখা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. সিরাজ মিয়া প্রথমেই হতাশা ব্যাক্ত করে বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে জেলার নেতৃবৃন্দ শাহজাহান মিয়াকেই মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কেন্দ্র থেকে ও দেয়া হল। এরপর হঠাৎ করেই কিভাবে গণেশ উল্টে গেল বুঝতে পারিনি। শাহজাহান মিয়ার পক্ষে প্রচারাণা ও শুরু করেছিল আওয়ামীলীগ। সে জায়গায় একজন মহিলাকে মনোনয়ন দেয় হল কিভাবে তা বুঝে আসছেনা। এছাড়া শাজাহান হলে বিজয় নিশ্চিত ছিল আমাদের।

এখন কি হয় জানিনা বলে ও মন্তব্য করেন তিনি। প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চাইলে আজমিরিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে তেমন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে আমরা প্রথমে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত পাই জলসূখা ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী শাহজাহান মিয়া। পরে কেন্দ্র হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অন্য আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছে। তবে যাকে দেয়া হয়েছে সেই রোকসানা বিএনপি থেকে আগত এবং ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে সে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ছিল এটি সত্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাহজাহান মিয়া কখনো কোথাও নিজেকে চেয়ারম্যান উল্লেখ করেননি। এ সংক্রান্ত সকল ফরম যাচাই করলে আপনি দেখতে পাবেন শাহজাহান মিয়াকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ