শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০ ২৪
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
১১ জানুয়ারী ২০ ২১
৮:১৪ অপরাহ্ণ

লাঘাটা পুন: খননে ধীর গতিতে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা ক্ষতি গুনছেন
কমলগঞ্জে বোরো আবাদ বঞ্চিত চার গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক
আসহাবুজ্জামান শাওন, কমলগঞ্জ:: বোরো ক্ষেতের উপর নির্ভরশীল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা দু’বছর ধরেই চাষাবাদ বঞ্চিত রয়েছেন। লাঘাটা নদী পুন: খনন কাজের জন্য দেয়া বাঁধে একদিকে জলাবদ্ধতা অন্যদিকে সেচের অভাবে শুষ্ক জমি খাঁ খাঁ করছে। ফলে বোরো আবাদ বঞ্চিত হওয়ায় চার গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক কৃষক দু’বছর ধরে ক্ষতি গুণছেন বলে কৃষকরা অভিযোগ তুলেছেন। 

কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদীতে দু’বছর ধরে পুন: খনন কাজ চলছে। নদী খননে সেচ সমস্যার কারণে ধূপাটিলা, রূপষপুর গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষক বোরো আবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে খনন কাজে বাঁধ দেয়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের কেওলার হাওর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় পতনউষারের প্রায় দু’শতাধিক কৃষক চাষাবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে বোরো নির্ভরশীল কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, লাঘাটা নদীর সতিঝিরগ্রাম এলাকায় স্লুইসগেট থাকায় সেচ সুবিধা নিয়ে এর আশপাশ এলাকায় কিছু লোক বোরো চাষাবাদের সুযোগ পেলেও এর নিম্নাঞ্চলে কৃষকরা দু’বছর ধরেই চাষাবাদ বঞ্চিত রয়েছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পতনউষারের বোরো চাষী আনোয়ার খান, ধূপাটিলা গ্রামের কৃষক আক্তার মিয়া, ফারুক মিয়া, ছমির মিয়া, রেহমান মিয়া, শওকত মিয়া বলেন, নদী খননের জন্য আমরা দু’বছর ধরেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। একদিকে জলাবদ্ধ অন্যদিকে সেচ সংকটে বোরো জমি খাঁ খাঁ করছে। দু’বছরে বোরো ক্ষেত করতে না পারায় আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের কাছে সহায়তা দাবি করছি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুন:খনন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতাধীন মৌলভীবাজার পওর বিভাগের আওতায় লাঘাটা খালের ১২৮৩০ মি. কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। ২০১৮ সনে নদী পুন:খননের জন্য সার্ভে সম্পন্ন হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৯ সনের ১১ ডিসেম্বর। দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১১ দশমিক ৮শ’ মিটার ও ১২ দশমিক ৮৩০ মিটার মিলিয়ে ২৪ দশমিক ৬৩০ মিটার খনন কাজ হবে। দু’উপজেলায় খননের জন্য ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স (প্রা:) লিমিটেড কমলগঞ্জ অংশে নদী খননের প্রাক্কলিত মূল্য ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ৮০৭ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৩০ নভেম্বর। তবে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় পুন: খনন কাজ এখনও ঝুলে আছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএএসআই এন্ড ইশরাত এন্টারপ্রাইজ জয়েনভেঞ্চার ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নিম্নাঞ্চল এলাকার খনন কাজ করছে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লাঘাটা পুন: খনন কাজ শুরুর সাথে সাথে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিলেও দু’বছর ধরে বোরো আবাদ বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের বিস্তীর্ণ বোরো আবাদী জমি পতিত রয়েছে আবার কেওলার হাওর এলাকার বোরো জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
কমলগঞ্জে হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব তোয়াবুর রহমান কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তোলে ধরে বলেন,  কেওলার হাওর এলাকায় যারা জমিতে রোপন করেছিল তাদের জমিও তলিয়ে গেছে। নদী খনন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই গোজামিল। এতে ক্ষতি গুণছেন কৃষকরা। কমলগঞ্জের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কৃষকদের সমস্যা নিয়ে সমাধানের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলেছি।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, বিষয়টি আমি গত সপ্তাহে শুনে জেলা পর্যায়ের একটি সভায় সেটি উপস্থাপন করেছি। তারপরও গুরুত্বসহকারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো। 

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, নদী খনন করতে গেলে কিছুটা তো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবেই। এই খনন কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ উপকৃত হচ্ছেন আবার কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন। সবকিছুর পরে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে তাগাদা দিচ্ছি।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ