শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০ ২৪
কুলাউড়া প্রতিনিধি ::
১২ জানুয়ারী ২০ ২২
৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চাকরী ফিরে পেতে চান আসল জহিরুল
১৮ বছর ধরে কারারক্ষীর চাকরি করছেন নকল জহিরুল

দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কুলাউড়ার আসল জহিরুলের নাম ব্যবহার করে কুমিল্লার নকল জহিরুল প্রতারণার মাধ্যমে সরকারী চাকরি করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন থেকে এই কর্মযজ্ঞ নকল জহিরুল চালিয়ে আসলেও বিষয়টি এতোদিন অজানা ছিলো আসল জহিরুলের।

বর্তমানে প্রকৃত জহিরুল বিষয়টি জানতে পারলে সরকারী কারারক্ষী পদের চাকরিটি ফিরে পেতে উদ্বর্তন কতৃপক্ষের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৌর শহরের জয়পাশা এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম এশু (৩৮) ২০০৩ সালে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শারীরিক ফিটনেস এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পরবর্তীতে নিয়োগের বিষয়ে কুলাউড়া থানা থেকে অধিকতর তদন্ত করা হয়। তবে চাকরির যোগদানপত্র এশুর কাছে পৌঁছায়নি। যোগদানপত্র না পাওয়ায় তিনি চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে কুলাউড়া শহরে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর কারারক্ষী ক্রমিক নম্বর ২২০১৪ নং মূলে জহিরুল ইসলাম এশু চাকরি করেন মর্মে কুলাউড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম খাঁন খছরুর কাছে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে একটি চিঠি আসে।

কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম খাঁন খছরু চিঠিটি পেয়ে একটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে জহিরুল ইসলাম এশুকে জানান। প্রত্যয়নপত্রটি পেয়ে জহিরুল ইসলাম এশু হতবাক হয়ে যান। অথচ তিনি কারারক্ষী পদে কোনো চাকরি করেন না।

কে বা কাহারা তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে এই পদে চাকরি করছেন সেই বিষয়টি জানিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং- ১১৮২) দায়ের করেন। এছাড়াও পৌর কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম খাঁন খছরু গত ২৭ ডিসেম্বর সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বরাবর একটি চিঠি পাঠান। এতে তিনি উল্লেখ করেন, জহিরুল ইসলাম এশু একজন ব্যবসায়ী, কারারক্ষী পদে চাকরি করেন না। বর্তমানে ২২০১৪ নং কারারক্ষী পদে যিনি চাকরী করছেন তিনি তাঁর ওয়ার্ডের কোনো স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকৃত জহিরুল ইসলাম এশুকে কারারক্ষী পদে নিয়োগ দানের জন্য এবং তাঁর স্থলে চাকরীরত ভূয়া জহিরুল ইসলামকে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এদিকে ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম এশু গত ২২ ডিসেম্বর সিলেটের ডিআইজি’র সাথে দেখা করে চাকরী ফিরে পাবার জন্য মৌখিক আবেদন জানান। এসময় ভুক্তভোগীকে ডিআইজি জানান, আমরা কাউন্সিলর বরাবর চিঠি দিয়েছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়া হবে। পরবর্তীতে পূনরায় প্রকৃত জহিরুল ইসলাম এশু চাকরী ফিরে পাওয়ার জন্য গত ৩ জানুয়ারী সিলেটের কারা উপ- মহাপরিদর্শক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন দেন তিনি। নিয়োগ পরীক্ষার ১৮ বছর পর জানা গেলো তাঁর নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে কর্মরত রয়েছেন জহিরুল ইসলাম নামের ওই ভূয়া ব্যক্তি। বিষয়টি জানাজানি হলে তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন, খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন। জহিরুল ইসলাম পরিচয়ধানকারী ভূয়া ওই চাকরিজীবি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বাড়ি কুমিল্লায়। কিন্তু কুলাউড়ার ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সিলেট ডিআইজি প্রিজনকে আমার সকল কাগজাদি জমা দিয়েছি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন। ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম খাঁন এশু বলেন, সরকারি চাকরি করার অনেক আশা নিয়ে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় সিলেট কারাগার থেকে আমার ঠিকানায় অধিকতর তদন্ত করা হয়। ভেবেছিলাম আমি চাকরি পাবো।

কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমার যোগদানপত্র না আসায় আমি চাকরিতে যোগদান করতে পারিনি। যখন আমার কাছে পৌরসভা থেকে চিঠি আসে তখন আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি। এখন আমি আমার সেই চাকরীটি ফিরে পেতে চাই। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন আছে। জহিরুল ইসলাম নামে যে ব্যক্তি চাকরী করছেন তার প্রকৃত নাম ও ঠিকানা সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। যদি একি নামে দু’জন হয় তাহলে তদন্ত করে প্রকৃত ব্যক্তি যাতে চাকরী পায় আমরা সেটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাঁর সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে আমরা শীঘ্রই ডাকবো। তদন্তে প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরবো। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন সিলেট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, জহিরুল ইসলাম নামে একজন ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত আছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান সিলেট কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন আছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ