রবিবার, মে ১৮, ২০ ২৫
এস ডি সুব্রত::
২০ এপ্রিল ২০ ২৫
২:২৭ অপরাহ্ণ

ইস্টার সানডে : যিশুর পুনরুত্থান দিবস
খ্রিস্টান  ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব হলো ক্রিসমাস বা বড়দিন । এর পরেই আছে ইস্টার সানডে । গুড ফ্রাইডের ঠিক পরের রবিবারই হলো ইস্টার সানডে।' খ্রিস্টানগণ ইস্টার সানডে বা পুণ্য রবিবার দিনটিকে যিশুর পুনরুত্থান দিবস হিসেবে পালন করেন। যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল পুণ্য শুক্রবারে।

আর তার দুই দিন পর পুণ্য রবিবারে তিনি পুনরায় জীবিত হয়ে শিষ্যদের মাঝে ফিরে এসেছিলেন বলে খ্রিস্টানগণ বিশ্বাস করেন। খ্রিস্ট ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের দুটো পার্ট রয়েছে, এক পার্ট হলো ওল্ড টেস্টামেন্ট যেখানে রয়েছে আগের নবীদের কিতাবের লিখাগুলো লিপিবদ্ধ আর আরেক পার্ট হলো নিউ টেস্টামেন্ট যেখানে সাধু লুক, মার্ক, জন আর ম্যাথিউ লিখেছেন যীশুর জীবনী।

আর এছাড়াও আছে যীশুর সাহাবী বা সঙ্গীদের কাজকর্ম ও ধর্মপ্রচারের কাহিনী। চার সাধুর লেখা জীবনী থেকে আমরা যীশুর জীবনের খ্রিস্ট ধর্মীয় বিবরণ জানতে পারি। সে অনুসারে যীশু জন্ম গ্রহণ করেন কুমারী মেরীর গর্ভে কোনো পুরুষের সাথে বিনা মিলনেই, যদিও সামাজিকভাবে তিনি ছিলেন কাঠমিস্ত্রী জোসেফের বাগদত্তা। তার জন্মের সুসংবাদ ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) এসে মেরীকে দিয়ে যান। জুদাহ প্রদেশের জেরুজালেমের পুব দিকে বেথেলহেমের গোয়ালে হয় যীশুর জন্ম।

মাতৃভাষা আরামায়িকে যীশুর আসল নাম ছিল ইয়েশোয়া। তিনি বড় হতে লাগলেন কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে করে। তিরিশ বছর বয়সে তিনি ধর্মপ্রচার শুরু করলেন। অনুসারীরা তাকে ঈশ্বরপুত্র বলে মেনে নিতে লাগল। উল্লেখ্য, খ্রিস্ট ধর্মমতে পিতা, পুত্র আর পবিত্র আত্মা এই তিন রূপে ঈশ্বর প্রকাশিত হন।  এর মাঝে স্বর্গীয় পিতা বলতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বোঝায় আর পুত্র যীশু হলেন মানবরূপে ঈশ্বরের বহিঃপ্রকাশ। তাই একই সাথে যীশুকে ঈশ্বর আর ঈশ্বরপুত্র হিসেবে বিশ্বাস করে খ্রিস্টানরা।

যীশুর আসল নাম ছিল আরামায়িক ভাষায় ইয়েশুয়া, যার আরবি রূপ ঈসা (আ) ।ইহুদীরা খ্রিস্ট বলে একজনের অপেক্ষা করছিল, যিনি ইহুদী জাতিকে পরিত্রাণ করবে। খ্রিস্ট বা মসীহ অর্থ পরিত্রাণকারী। যীশু যখন খ্রিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন, তখন ইহুদীরা সেটা মানতে চাইলো না। যীশু একের পর এক অলৌকিক কর্ম দেখিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে লাগলেন, এমনকি মৃতকে জীবিত করেও দেখালেন। কিন্তু একই সাথে ধর্মব্যবসায়ী  ইহুদীদের পাপাচার প্রকাশ করে দেয়ায় তারা যীশুকে ঘৃণা করতে লাগলো। তারা তাকে ষড়যন্ত্রে ফাঁসাতে চেষ্টা করল। 

যীশু তার শিষ্যদের জানালেন, তারই এক শিষ্য অর্থের বিনিময়ে তাকে ধরিয়ে দেবে ইহুদী চক্রান্তে পাঠানো রোমান বাহিনীর কাছে। উল্লেখ্য, তখন ইসরায়েল ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে এবং ঐ এলাকার স্থানীয় শাসক ছিলেন রাজা হেরোদ। রোমান সম্রাট টাইবেরিয়াসের প্রেরিত শাসক পন্টিয়াস পাইলেট ইহুদীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বাহিনী পাঠান এবং তারা যীশুকে ধরে নিয়ে আসে।

জুডাস ইস্কারিয়ট নামের এক শীষ্য ৩০টি রুপোর মুদ্রার বিনিময়ে যীশুকে ধরিয়ে দিয়েছিল। পন্টিয়াস যদিও বুঝতে পারছিলেন যীশু এমন কিছু করেননি যে তাকে ইহুদীদের চাওয়া মাফিক ক্রুশে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, তারপরেও জনমতের বিরুদ্ধে যেতে পারলেন না তিনি। এই নিষ্পাপ লোকের রক্ত ইহুদীদের উপরেই পড়বে, এমন কথা বলে তিনি যীশুকে দণ্ড দিলেন। শুক্রবার যীশুকে ক্রুশে চড়ানো হলো এবং দুপুরের পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন, অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে। এই কষ্টকে বলা হয় “প্যাশন অফ ক্রাইস্ট”।
তিনি মারা যাবার পর ভূমিকম্পে ইহুদীদের বাইতুল মুকাদ্দাস কেঁপে উঠল, অনেক কিছুই ভেঙে গেল। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে, এদিন যীশু মানবজাতির পাপ মোচন করতে আত্মাহুতি দেন। সকলের পাপ তিনি নিয়ে নেন। এজন্য এ করুণ ঘটনার শুক্রবার “গুড” ফ্রাইডে নামে পরিচিত। তাকে শায়িত করা হয় এক গোপন শিষ্য জোসেফ অফ আরামাথিয়ার কবরে। গুহার ভেতর লাশ। তার লাশ তেল আর সুগন্ধিতে মাখিয়ে গুহাতে শায়িত রাখা হয় এবং গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়।
রবিবার দিন গিয়ে দেখা গেল কবরের মুখ খোলা, পাথর সরানো, যীশুর লাশ নেই, কাফন আলাদা করে পাশে রাখা। যীশু জীবিত হয়ে উঠেছেন।
তিনি অনেক শিষ্যের সাথে দেখা করলেন, সকলকে ধর্মপ্রচার করতে বললেন। এরপর স্বর্গে আরোহণ করলেন। রবিবার দিন যীশু পুনরুত্থিত হওয়ায় এই রবিবার খুব গুরুত্ববাহী খ্রিস্টানদের জন্য। একেই ইস্টার সানডে বলে।

ইস্টার শব্দটা কেন এসেছে কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না । কিন্তু এটা ইহুদীদের ইদুল ফিসাখ বা পাসওভার  উৎসবের সাথে মিলে গিয়েছিল সময়ের দিক থেকে। লাস্ট সাপারে যীশু পাসওভার উৎসবের খাওয়াই খেয়েছিলেন।সৌর আর চন্দ্র ক্যালেন্ডারের গণ্ডগোলের কারণে ইস্টারের তারিখ নির্ধারণ একটা ঝামেলার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে বিংশ শতকে সিদ্ধান্ত হয়, এপ্রিলের দ্বিতীয় শনিবারের পরদিন রবিবার ইস্টার পালিত হবে। অবশ্য কিছু কিছু খ্রিস্টান গ্রুপ, যেমন প্রটেস্টান্টরা ইস্টার বর্জন করে, বাইবেল-বহির্ভূত বলে। তবে বৃহত্তম গ্রুপ ক্যাথোলিকরা এটা পালন করে চলে। এ অনুষ্ঠানের আগে তারা ৪০ দিনের রোজা রাখে, যা লেন্ট নামে পরিচিত। খ্রিস্টধর্মের পর আব্রাহামীয় ধর্ম ইসলাম এর আবির্ভাব ঘটে । পবিত্র কুরআনে যীশু অর্থাৎ হজরত ঈসা (আ)-কে নবী এবং খ্রিস্ট বা মসীহ বলে মেনে নেয়া হয়, কিন্তু ঈশ্বর বা ঈশ্বরপুত্র অস্বীকার করা হয়, যেমন অস্বীকার করা হয় যীশুর ক্রুশে মৃত্যুকে।

এজন্য মুসলিমরা বিশ্বাস করে যীশু ক্রুশে মারা যান নি, বরং আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। বহু পূর্বে  মেসোপটেমিয়া এলাকার খ্রিস্টানরা ডিমের গায়ে লাল রঙ মেখে স্মরণ করত যীশুর রক্ত ঝরাকে। আর ভেতরে ফাঁপা ডিম যীশুর শুন্য কবরের রূপক। কালক্রমে সেই লাল রঙ করা ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়ায় ডিমের গায়ে কারুকার্য করার প্রথাতে। একে ইস্টার এগ বলে। কথিত আছে যে, ইস্টার বানি বা খরগোশ ঝুড়িতে করে এই ইস্টার এগ উপহারগুলো দিয়ে যায় শিশুদের, ঠিক যেমনটা সান্তা ক্লজ ক্রিসমাসের উপহার দিয়ে যায়। অবশ্য সকলেই তারা বড় হয়ে জানতে পারে, সান্তা ক্লজ আর ইস্টার বানি দুটোই নিছক কল্পনা। যুগ যুগ ধরে গুড ফ্রাইডে আর ইস্টার সানডে বা পুণ্য রবিবার পালিত হয়ে আসছে। এটাকে যিশুর পূনরুত্থান দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়। যিশুর পূনরুত্থান দিবসে সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে যাক বসুন্ধরা ,দূর হোক সংকীর্ণতা, ধর্মান্ধতা ও অপ সংস্কৃতি। 

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক সুনামগঞ্জ।
নিলয় ১৭৪/৩ পূর্ব নতুন পাড়া, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।
sdsubrata2022@gmail.com

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ