শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০ ২৪
এস ডি সুব্রত:
১৯ ডিসেম্বর ২০ ২১
৮:০ ৩ অপরাহ্ণ

মীর মশাররফ হোসেনের জীবন ও সাহিত্যকর্ম: এস ডি সুব্রত

বঙ্কিমযুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ ছিলেন মীর মশাররফ হোসেন। মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়ায় ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর তার জম্ন। পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার। নিজ বাড়িতে মুনশির নিকট আরবি ও ফারসি শেখার মাধ্যমে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি।তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কুষ্টিয়া স্কুলে।

পরে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে কলকাতার কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন; কিন্তু লেখাপড়া আর বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। কর্মজীবনের শুরুতে মশাররফ হোসেন পিতার জমিদারি দেখাশুনা করেন। পরে তিনি ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকরি নেন এবং ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ব্যবস্থাপক হন। এক সময় এ চাকরি ছেড়ে তিনি লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় যান।তিনি প্রথম জীবনে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ও কবি ঈশ্বরগুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণ করতেন। কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে তার হৃদ্যতারকা রনে তাকে কাঙাল হরিনাথের সাহিত্যশিষ্য বলা হয়।

১৮৯০ সালে তিনি ‘হিতকরী’ নামে একখানি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। মীর মশাররফ আজিজননেহার ও ও হিতকরী নামে দুটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’ তার শ্রেষ্ঠ রচনা। তার সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ মীর মশাররফ হোসেন বিশুদ্ধ বাংলায় অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে আরবি-ফারসি মিশ্রিত তথাকথিত মুসলমানী বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করেছিলেন। কারবালার করুণ ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে রচিত বিষাদসিন্ধু উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার চার বছর পর মশাররফের প্রথম উপন্যাস রত্নবতী প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি একে একে কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। মীর মশাররফ হোসেনের মোট ৩৬টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায় ।তার রচনা হলো -- গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী-সেতু , বসন্তকুমারী নাটক , জমিদার দর্পণ , এর উপায় কি , বিষাদ-সিন্ধু, সঙ্গীত লহরী, গো-জীবন,বেহুলা গীতাভিনয় , উদাসীন পথিকের মনের কথা , তহমিনা , টালা অভিনয় , নিয়তি কি অবনতি , গাজী মিয়ার বস্তানী , মৌলুদ শরীফ , মুসলমানদের বাঙ্গালা শিক্ষা , বিবি খোদেজার বিবাহ , মদিনার গৌরব , বাজীমাৎ , আমার জীবনী , আমার জীবনীর জীবনী বিবি কুলসুম ইত্যাদি।

তার জমিদার দর্পণ নাটকটি ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সংঘটিত কৃষক-বিদ্রোহের পটভ‚মিকায় রচিত। তিনি সমকালীন সমাজের অসঙ্গতি ও সমস্যার ওপর তীক্ষ কটাক্ষপাত করেন। তিনি সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে মুক্ত ছিলেন। উদার দৃষ্টিকোণ থেকে ‘গোকুল নির্মূল আশঙ্কা’ প্রবন্ধ লিখে তিনি নিজের সমাজ কর্তৃক নিগৃহীত হন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাত্র আঠার বছর বয়সে তার পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ী জেলার পদমদী গ্রামে নিজ বাড়িতে মীর মশাররফ হোসেন মারা গেলে বিবি লসুমের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।

ভারতব্যাপী হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ও সংঘর্ষ দূরীকরণে তিনি বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন, ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে মানবিক মূল্যবোধ ও বিচার সাম্যের এক দুর্লভ পরিচয় রয়েছে তার প্রবন্ধে। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের আদর্শ তুলে ধরেন। তিনি গাজী মিয়া ছদ্মনামে লিখেছিলেন রসরচনা ' গাজী মিয়ার বস্তানী ' । লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ। ০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ । subratadassulla@gmail.com

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ