৬:১১ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানকে উড়িয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়
দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভীতটা গড়ে দিয়েছিলেন দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। পরে ব্যাট হাতে আনুষ্ঠানিকতা সারলেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। পাকিস্তানকে উড়িয়ে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশও। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে স্বাগতিকদের ১০ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা।
স্রেফ ৩০ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ পূরণ করেছে ৬.৩ ওভারে। ১৪তম টেস্টে এসে পাকিস্তানকে হারাতে পারল বাংলাদেশ। এর আগে দুই দলের মধ্যকার ১৩ টেস্টের ১২টিতেই হেরেছিল দলটি। একটি হয়েছিল ড্র। দেশের বাইরে এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়। প্রথমবার টেস্টে ১০ উইকেটে জয়ের কীর্তিও গড়ল দল।
সব সংস্করণ মিলিয়ে এর আগে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ ২০ ম্যাচ খেলে হেরেছিল ২০টিতেই। সবদিক থেকেই এই টেস্ট জয়টি অনন্য এক কীর্তি। ১৩ বলে ১ চারে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন সাদমান। ২৬ বলে তিন চারে ১৫ রান করেন জাকির। তার চারেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের একাদশে দলে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার রাখেনি পাকিস্তান। খেলেছে ৪ পেসার নিয়ে। সেই স্পিনে ধরাশায়ী হয়েই ম্যাচ হারল শান মাসুদের নেতৃত্বাধীন দলটি।
এ গেল একাদশের হিসাব। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করায় মাসুদের সমালোচনা শুরু হয়। এসময় রিজওয়ান ১৭১ রানে ব্যাট করলেও তাকে দ্বিশতকের সুযোগ দেওয়া হয়নি। রোববার শেষ দিনের দ্বিতীয় সেশনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে স্রেফ ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের সর্বনিম্ন। এর আগে একবারই দুইশ রানের নিচে অলআউট হয়েছিল তারা। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে, ১৭৫ রানে। দারুণ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ম্যাচটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
১ উইকেটে হারতে হয়েছিল ইনজামাম-উল হকের অপরাজিত ১৩৮ রানের কাছে। পাকিস্তানকে অল্পতে আটকাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন মিরাজ ও সাকিব। ১১.৫ ওভারে ২১ রানে মিরাজের শিকার ৪ উইকেট। ১৭ ওভারে ৪৪ রানে ৩টি শিকার ধরেন সাকিব। একটি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ। তবে জয়ের আসল নায়ক মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে তার বীরোচিত ১৯১ রানের কল্যাণে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের জবাবে ১১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তাই অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের হাতে।
১০ ওভারে ১ উইকেটে ২৩ রানে দিন শুরু করে পাকিস্তান। মধ্যাহ্ন-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের একটু নিচু হওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান শাহিন শাহ আফ্রিদি। পাকিস্তান হারায় সপ্তম উইকেট। খানিক পর নাসিম শাহকে (২২ বলে ৩) শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ বানান সাকিব। খুররাম শেহজাদকে নিয়ে একপর লড়াই চালিয়ে যান রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত রিজওয়ানকে ইনসাইজ এজ বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মিরাজ। নিজের পরের ওভারে মোহাম্মদ আলিকেও বোল্ড করে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেন এই স্পিনার। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৭১ রান করা রিজওয়ান এবার করেছেন ৮০ বলে ৫১ রান। প্রথম সেশনেই জয়ের ভিত তৈরি করে ফেলে বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের হাত ধরে দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মেলে সাফল্য।
রিভিউ নিয়ে শান মাসুদকে ফেরায় বাংলাদেশ। আল্ট্রাএজে মেলে ব্যাটের কানা স্পর্শের প্রমাণ। পাকিস্তান অধিনায়ক ৩৭ বলে ২ চারে ১৪ রান করে ফেরেন। শূন্য রানে জীবন পাওয়া বাবর আজমকেও টিকতে দেননি বোলাররা। নাহিদ রানার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। তবে টাইমিং করতে পারেননি। বল ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ভাঙে ৮১ বল স্থায়ী ৩৮ রানের জুটি।
তিন চারে ৫০ বলে ২২ রান করেন বাবর। পরের ওভারে সউদ শাকিলকে হারায় পাকিস্তান। সাকিব আল হাসানের বলে লাইন মিস করে স্টাম্পিং হন শাকিল। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ক্যারিয়ারে প্রথমবার আউট হলেন শূন্য রানে। এরপর এসেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আব্দুল্লাহ শফিকের সাথে গড়েন ৩৭ রানের জুটি। সাকিবকে হাকাতে গিয়ে বল আকাশে তুলে আউট হন এই ওপেনার। শেষ হয় তার ৮৬ বলে ৩৭ রানের লড়াই।
পরের ওভারে আগা সালমানকে রানের খাতা খুলতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। স্লিপে এক হাতে দারুণ ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের সেশনে তো বাংলাদেশের উল্লাসে মাতার গল্প। একই মাঠে আগামী শুক্রবার শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডিক্লে) বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬৫ পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৩/১) ৫৫.৫ ওভারে ১৪৬ (শাফিক ৩৭, মাসুদ ১৪, বাবর ২২, শাকিল ০, রিজওয়ান ৫১, সালমান ০, আফ্রিদি ২, নাসিম ৩, শাহজাদ ৫*, আলি ০; শরিফুল ১১-২-২০-১, হাসান ১০-৩-২০-১, সাকিব ১৭-৩-৪৪-৩, নাহিদ ৬-০-৩০-১, মিরাজ ১১.৫-২-২১-৪) বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩০) ৬.৩ ওভারে ৩০/০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*; আফ্রিদি ২-০-৮-০, নাসিম ৩-১-৮-০, সালমান ১.৩-০-৯-০)