বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০ , ২০ ২৪
এস ডি সুব্রত::
২৮ জুন ২০ ২৩
৬:০ ০ অপরাহ্ণ

ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও গুরুত্ব: এস ডি সুব্রত
  ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটি বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ।এর মধ্যে দ্বিতীয় টি হচ্ছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ মানে খুশি আর আজহা মানে ত্যাগ বা কোরবানি।ঈদুল আজহা মানে ত্যাগের খুশি।আরবী আওদ বা য়াউদ শব্দ থেকে ঈদ শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ দাঁড়ায় আনন্দ বা খুশির উপলক্ষ। ঈদের আরেকটি অর্থ হলো ফিরে আসা। এদিন মুসলিমরা ফজরের নামাজের পর ঈদগায় গিয়ে দুই রাক্বাত ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে এবং পরে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী গরু,ছাগল,ভেড়া ,মহিষ বা উট কোরবো দেয় পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।
  ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকায় ঈদুল আজহা জ্বিলহজ্জের দশ তারিখে পড়ে।তবে স্থানীয় ভাবে ঈদের তারিখ জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।  আরবের কোন দেশে ঈদুল আজহা কে বড় ঈদ বা ঈদুল কোবরাও বলা হয়।  কোরবানি কে ভিত্তি করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য যে সুনির্দিষ্ট আনন্দ ময় অপার সুযোগ তাকেই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ বলে। প্রচলিত অর্থে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত তরিকায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যাক্তির পশু জবাই করাকে কোরবানি বলে।

         কোরবানির ইতিহাস ততটাই প্রাচীন যতটা প্রাচীন মানব ইতিহাস।মাধব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কোরবানিহয়রানি আদম (আ.) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানি।সকল নবীর উম্মতে মধ্যেই অবিচ্ছিন্ন ভাবে কোরবানির ধারাবাহিকতা চলে আসছে।মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে পৃথিবীর সব জাতি কোন না কোন আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে। বর্তমানে কোরবানির যে নিয়ম হয়েছে তা মূলত হযরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) কে আল্লাহর নামে কোরবানি দয়ার অনুসরনে মক্কা নগরীর জন মানবহীন মিনা প্রান্তরে আল্লাহর দুই আত্মনিবেদিত বান্দা ইবরাহিম ওইসমাইল আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তুলনাহীন ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তারই স্মৃতি চারন হচ্ছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) যেমন আল্লাহর নির্দেশে জীবনের সবচাইতে প্রিয় জিনিস পুত্র ইসমাইল আ.) কে কোরবানিকরতে প্রস্তুত ছিলেন ।ঈদুল আজহার দিন মুসলমানরাওতেমনি পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজেদের প্রিয়তম জানমাল আল্লাহর পথে কোরবানি করার সাক্ষ্য প্রদান করেন। হযরত ইবরাহিম (আ.)  এর সেই কোরবানি কে শ্বাশত রুপদানের জন্যই আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল (সা) এই দিনে মুসলমানদের কে ঈদুল আজহা উপহার দিয়েছেন এবং এবং কোরবে করার নির্দেশ দিয়েছেন।

  কোরবানি সম্পর্কে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কোরবানি কবিতায় বলেছেন---
      ওরে হত্যা নয়,আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন
     এই দিনই মিনা ময়দানে , পুত্র স্নেহের গর্দানে
      ছুরি হেনে খুন ক্ষরিয়ে নেই
      রেখেছে আব্বা ইবরাহিম সে আপনা রুদ্র পণ!
       ছি ছি কোপা মা ক্ষুদ্র মন!
      আজ আল্লাহর নামে জান কোরবান
      ঈদের পুত বোধন।
      ওরে হত্যা নয়,আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন!"
  নজরুলের এই কবিতায় কোরবানির তাৎপর্য ফুটে উঠেছে।ঈদুল আজহা হযরত ইবরাহিম (আ.) বিবি হাজেরা ওইসমাইল এর পরম ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কারনেই হযরত ইবরাহিম (আ) ইবরাহিম কে পবিত্র কোরআনে মুসলিম জাতির পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরবানি হল চিত্তশুদ্ধি আর পবিত্রতার মাধ্যম । এটি সামাজিক রীতি হলেও আল্লাহর জন্যই এই রীতি প্রবর্তিত হয়েছে। আমাদের চিত্ত সমাজ সংসার তার উদ্দেশ্যে ই নিবেদিত এবং কোরবানি হচ্ছে সেই নিবেদনের একটি প্রতীক। কোরবানির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে রাজি আছে তার পরীক্ষা। কোরবানিকেবল পশু কোরবানি নয়,। নিজের পশুত্ব , নিজের ক্ষুদ্রতা,নীচতা , স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা কে ত্যাগ করাই কোরবানি।
    ঈদুল আজহার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (আ) বলেছেন-- কোরবানির দিনে মানব সন্তানের কোন নেক আমলই আল্লাহ তায়ালার নিকট এত প্রিয় নয় ,যত প্রিয় কোরবানি করা। কোরবানির পশুর শিং,পশম ক্ষুর কিয়ামতের দিন মানুষের নেক আমলনামায়  এনে দেয়া হবে ‌। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। 

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।
          
ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ