৭:০ ১ অপরাহ্ণ

কমলগঞ্জে মাখন চন্দ্র সূত্রধর সবার কাছে মানবিক ইউএনও
মানবিক ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর। কখনও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানুষকে সচেতন করছেন, কখনও ছুটে যাচ্ছেন হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চার চারটি দফতরের কাজ করে যাচ্ছেন।
তার প্রথম পরিচয় তিনি জনবান্ধব ও মানবিক একজন কর্মকর্তা । তিনি জনপ্রতিনিধি নন, তবে জনপ্রতিনিধির মতোই জনপ্রিয়। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বের পাশাপাশি একাধারে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসক এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
কাজ পাগল মানুষ বলতে যা বোঝায় এ যেন ঠিক তাই! সকাল নয়টা থেকে শুরু করে কখনো রাত বারোটা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ করা এটা যেন তার প্রতিদিনের রুটিন। দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে কোনো কোনো দিন রাত বারোটার পরেও অফিস করতে দেখা যায়। তিন দফতরের কাজের পাশাপাশিও তিনি উপজেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর।
২০২৫ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর ৮ জানুয়ারি তিনি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। সেসময়ে কমলগঞ্জ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নিজ হাতে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরান। এতে অল্পদিনেই তিনি সফল হন।
দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় ও মানবিক একজন ব্যক্তি হিসেবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কর্মদক্ষতা, মানবিকতা ও জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ ও একজন জনপ্রিয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি উন্নয়ন ও জনসেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন।
গত এক বছরে উপজেলা ও পৌরসভাজুড়ে কয়েক কোটির টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করেছেন। জানা গেছে, মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলায় অবৈধভাবে বালু মজুদ রাখা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ইভটিজিং, মাদক, খাবার হোটেল, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ার, অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করার জন্য তাঁর রয়েছে বিশেষ নজরদারি।
রাস্তাঘাট নির্মাণ, সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দ্রুতাতার সাথে সেবাপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় উপজেলার জনগণের মনে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রদর এর প্রতি একটা আস্তা জমেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশংসা করে অনেকেই বলেন, শত বছর বেঁচে থাকুক মানবিকতার এমন মহৎ মানুষটি।
স্থানীয়রা জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, উপজেলার রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসায় সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। উপজেলা অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় দাবি দ্রুত সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি আস্থা। ইউএনও মাখন চন্দ্র সুত্রধর, জুলাই আগস্ট মাসের ভূমি ব্যবস্থাপনা পারফরম্যান্স এর উপরে জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ড। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ টি মোবাইল কোর্টে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার উপরে জরিমানা করা হয়েছে। যা সরকারের কোষাগারে জমা হয়।
তারা জানান, শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি অসহায়, গরিব ও দুঃস্থ মানুষের জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেন। তিনি জনবান্ধব, সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি শতভাগ জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করা হচ্ছে। উপজেলা ও পৌর প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিগত এক বছরে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রদর এর প্রচেষ্টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিট দ্য স্টুডেন্স অনুষ্ঠানে মতবিনিময় করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, শিক্ষার মানোন্নয়ন বিভিন্ন আলোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রদান, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার হল পরিদর্শন ও নকলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ, সুরক্ষা সামগ্রি, সিলিং ফ্যান, ক্রীড়া সামগ্রি ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রতিবন্ধি শিশু ও ব্যক্তিদের মাঝে হুইল চেয়ার প্রদান, বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ ও গাছের চারা বিতরণ, ক্লাইমেট মেলা, কৃষি মেলার মাধ্যমে কৃষিতে উদ্বুদ্ধকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে শুকনা খাবার, টিন, নগদ অর্থ ও চেক বিতরণ, মশকনিধণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ, উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য অবমুক্তকরণ, ভূমিবিষয়ক নানা জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ, কয়েক শতাধিক ব্যক্তিকে গাভি পালনে প্রশিক্ষণ ও কয়েক কোটি টাকার স্বল্পসুদে ঋণ ও অনুদান বিতরণ, আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, আলীনগর, রহিমপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গায় খাস জমি উদ্ধার, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে জনসচেতনতা তৈরিতে উঠান বৈঠক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, জরিমানা ও কারাদণ্ড প্রদান, বিভিন্ন ইটভাটা, দোকানপাট, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, অবৈধ জাল অভিযান পরিচালনা করেন। এ ছাড়াও কমলগঞ্জ পৌরসভায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলককাজ বাস্তবায়ন সহ ড্রেন নির্মাণ, ড্রেন সংষ্কার ও নিয়মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন, সচেতনতামূলক মতবিনিময়, স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন খাল পরিষ্কার, খাল খননপূর্বক স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূরিকরণ, বিভিন্ন স্থানে কার্লভার্ট নির্মাণ ও রাস্তা সংষ্কার হাট বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও স্থানে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ নানা উন্নয়ন ও সেবামূলককাজ করে যাচ্ছেন ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রদর। এ বিষয়ে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ায়ই আমার কাজ। আর এই চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কমলগঞ্জ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। আমার কাছে সবচেয়ে বড় সফলতা মনে হয়েছে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে অনেক অনাবাদী জমি চাষের আওতায় এসেছে। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংষ্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তোরত্তর উন্নতি হচ্ছে। পৌরসভার বেশ কিছু উন্নয়নমূলককাজ চলমান। পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও চলমান। তিনি আগামীর পথচলায় সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।’