৮:০ ২ অপরাহ্ণ
সিলেট-৩ আসন : বিএনপির হাফ ডজন প্রার্থীর মধ্যে ,তৃণমূলে জনপ্রিয় জামায়াত
মাঠে লড়াইয়ে চূড়ান্ত এম এ মালিক
সুরমা, কুশিয়ারা নদী আর হাকালুকি হাওর বেষ্টিত তিন উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ সংসদীয় আসন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় সরগরম এখন নির্বাচনী এলাকা। দীর্ঘ দিনে আসনটিতে দেশ ও প্রবাসে নির্যাতিত ও ত্যাগী অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন। সিলেট শহরের পাশে আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দল একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে ছিলেন হাফ ডজন নেতা। সব জল্পনা কল্পনা শেষে কেন্দ্রীয় বিএনপি'র চুড়ান্ত করলো তাদের মনোনীত প্রার্থী।
সন্ধা ছয়টায় ঢাকাস্থ গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চুড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । এদের মধ্যে মাঠে গন মিছিল,সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছিলেন তিনজন। তবে এখন পর্যন্ত তৃণমূলে সাধারণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় জামায়াত প্রার্থী। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহসভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা মোশাহিদ হোসাইন, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা, বিশিষ্ট সমাজসেবী ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই ও ফখরুল ইসলাম লয়েছ হাফ ডজন প্রার্থী মাঠে ছিলেন।
এছাড়া দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর ও বর্তমান জেলা যুব বিভাগের সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী রাজু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নজরুল ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা মইনুল ইসলাম আশরাফী।
দলের বাহিরে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ব্যারিস্টার মোস্তাকিম রাজা চৌধুরী, এডভোকেট আফরুজ উদ্দিন ও মইনুল বাকর। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে সিলেটে জেলা এই আসনে দীর্ঘ দিন দরে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম। এই দু’জন আওয়ামীলীগের আমল থেকে দেশের দুর্যোগকালীন সময়ে মাঠে রয়েছেন এবং তাদের সাংগঠনিক অবস্থান সমান ছিল । জামায়াতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস নির্বাচনী এলাকায় এ দুই প্রার্থী নিয়মিত সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
এদিকে জামায়াত সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা লোকমান আহমদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা, বিশিষ্ট সমাজসেবী ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ব্যাপক প্রচার ছিল ।
এক সময় সিলেট-৩ আসনভূক্ত উপজেলাগুলোতে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থান খুব শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু গত দেড় দশকে সাংগঠনিক অবস্থা জোরদার হয়েছে। দুই উপজেলায় জামায়াতের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার আসনটিতে দলীয় প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদকে বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীরা দিনরাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেট-৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা দিলওয়ার হোসেন এলাকায় একজন সজ্জন ও উপকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত।
এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন। স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন অধিকারী দিলওয়ার হোসেনের পক্ষে তাঁর দলীয় নেতাকর্মীরাও আসনটিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে তৃণমূলের মানুষের কাছে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যারিস্টার এম এ সালাম চব্বিশের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর দেশে ফিরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালান।
গত কয়েকদিন আগে ফের দেশে ফিরে এসে ২৫ অক্টোবর শনিবার চন্ডিপুলে গণমিছিল ও সমাবেশ করেন বিশাল এই সমাবেশে জনসমর্থন বেশ লক্ষণীয়। রাজনীতির বাইরে তিনি তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। ২৮ অক্টোবর একই সাথে বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সমাবেশে করেছেন। ২৬ অক্টোবর এম.এ মালিক ফেঞ্চুগঞ্জে জনসমাবেশ করেন,২ সেপ্টেম্বর বালাগঞ্জে জনসমাবেশ করেন ব্যারিস্টার এম এ সালাম।
আওয়ামী লীগ সরকারের হুমকিতে গত ১৭ বছর দেশে ফিরতে পারেননি এম এ মালিক। ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে ফিরে এম এ মালিক সিলেটে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুটি বিশাল সমাবেশ করেন। এছাড়া তিনি দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকায় ডিপটিউবওয়েল স্থাপন, চক্ষুসেবা কার্যক্রম এবং আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে দলকে সুসংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও আন্দোলনে অংশ নেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার মানুষের সুখে-দঃখে পাশে রয়েছেন। তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে প্রতিদিন ঘুরছেন। সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের মাধ্যমে লিফলেট বিতরণ করে তিনি বিএনপির সাথে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নির্যাতিত নেতা হিসেবে পরিচিত।
ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে জামাল ছিলেন রাজপথে সক্রিয়। দলের দুর্দিনে রাজপথে তার সক্রিয় ভূমিকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এলাকায় তিনিও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার-প্রচারণায়। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ জানান, আসনটিতে এখন জামায়াত সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। সাধারণ মানুষ আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।