৪:৪৬ অপরাহ্ণ
ফাইল ছবি
সিলেট-৫ এ এখনো প্রার্থী ঘোষণা হয়নি বিএনপির: জোটের স্বার্থে কি আবারও আসন ছাড়ছে দল?
সারাদেশে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হলেও সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও হতাশা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন,“তাহলে কি এবারও জোটের স্বার্থে এই আসন ইসলামী দলের জন্য, বিশেষ করে জমিয়তের প্রার্থীর কাছে ছেড়ে দিচ্ছে বিএনপি?” এই আসনে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ১৯৯১, ২০০১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আলেম প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামী ভোটব্যাংকের এই দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবই বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থীর প্রতি বিএনপির সমর্থনের নজির রয়েছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় দলটি জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে সমর্থন জানিয়ে আসনটি জোটের স্বার্থে ছাড়তে পারে,এমন গুঞ্জনই এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
তবে মাঠে এখন একাধিক ইসলামী ঘরানার প্রার্থী সক্রিয়। আলোচনায় রয়েছেন জামায়াতের হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান, খেলাফত মজলিসের মুফতি আবুল হাসান, ইসলামি আন্দোলনের মুফতি রেজাউল করিম আবরার ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা রেজাউল করিম জালালী। রাজনৈতিক মহলের মতে, এদের উপস্থিতিতে ভোটের ময়দানে বিভাজন তৈরি হলে বিএনপি কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে,যদি দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী না দিলেও জমিয়তের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানায় বা নীরবভাবে ‘প্রক্সি সমন্বয়’ রাখে।
বিএনপি’র প্রার্থী তালিকায় দেরি হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ। দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে তোলা সংগঠনটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, “আসনটা কি কেবল জোটের স্বার্থেই, নাকি তৃণমূলের ত্যাগেরও কোনো মূল্য আছে?” মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন সক্রিয় নেতার প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। চাকসু মামুন লিখেছেন, “মহাসচিবের ঘোষণায় আমাদের হতাশার কিছু নাই। নিশ্চয়ই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল বিএনপি প্রতিষ্ঠিত করেছি।
বৃহত্তর সংগ্রামের প্রস্তুতি নিন।” সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী পাপলু লিখেছেন, “রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে হতাশার কোনো স্থান নেই। শুরু করতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে পথচলা। ইনশাআল্লাহ ধানের শীষ অর্জিত হবেই।” জাকির হোসাইন বলেছেন, “হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইনশাআল্লাহ সময়মতো আমাদের আসনেও ধানের শীষের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। আমাদের দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধ থাকা।” বিশ্লেষকরা বলছেন, সিলেট-৫ আসনের ইতিহাস ও ভোটের বাস্তবতা বিবেচনায় জমিয়তের প্রার্থীই এখানে বিএনপির জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য জোট-সঙ্গী হতে পারে।
কারণ, মাওলানা মুশাহীদ বাইয়মপুরী, মাওলানা ওবায়দুল হক উজিরপুরী, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর মতো আলেম প্রার্থীরাই অতীতে এই আসনে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, “ধানের শীষ এবারও কি জোটের স্বার্থে মওকুফ থাকবে, না কি শেষ মুহূর্তে বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূলের স্বপ্ন পূরণ করবে?” সবকিছু এখন নির্ভর করছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।