রবিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০ ২৫
আসহাবুজ্জামান শাওন, কমলগঞ্জ::
১৩ ডিসেম্বর ২০ ২৫
৬:২৭ অপরাহ্ণ

কমলগঞ্জে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংস্কৃতির চর্চা শীর্ষক আলোচনা সভা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর মণিপুরী ললিতকলা একাডেমিতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংস্কৃতির চর্চা, সমস্যা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পৃথিবীর সব জাতির নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষার অধিকার রয়েছে কিন্তু সব জাতিসত্তার ভাষার স্বকীয়তা ঠিকঠাক ভাবে বজায় থাকছেনা।

আমাদের দেশেই অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিভিন্ন সমস্যার ।

কিন্তু একুশের চেতনাকে সমুন্নত করে মর্যাদা অটুট রাখতে সব জাতির মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৭ টা উপজেলার মাধবপুর মনিপুরী ললিতকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির হলরুমে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংস্কৃতির চর্চাঃ সমস্যা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক প্রভাস চন্দ্র সিংহের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও চলচ্চিত্রকার মোহাম্মদ রোমেল। একাডেমির সংগীত বিভাগের প্রশিক্ষক সুতপা সিনহার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসহাবুজ্জামান শাওন, মনিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র সিংহ প্রমূখ।

অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, লেখক গবেষক চন্দ্র কুমার সিংহ, শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার সিংহ ও কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি পিন্টু দেবনাথ।

প্রধান বক্তা তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে নিজ ভাষার চর্চা কমে যাচ্ছে দিন দিন। তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষার যথাযথ প্রয়োগ ও অন্তর্ভুক্তির অনেক অভাব রয়েছে।

ভাষার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিও আজ হুমকির মুখে,দারিদ্র্য এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাপে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা খুবই জরুরী।

বাঙ্গালীদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং তাদেরও সংরক্ষণে অংশীদার করা যেমন, সাংস্কৃতিক উৎসব, মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৃ-গোষ্ঠির ভাষার ব্যবহার ও চর্চাকে উৎসাহিত করা। তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষা থাকলেও সেগুলো এখন অনেক সীমাবদ্ধতার মুখে। এসব জনগোষ্ঠীর নতুন প্রজন্মকে মূলস্রোতে প্রবেশ করতে হলে এমন ভাষা শিখতে হচ্ছে যার সঙ্গে তাদের নিজস্ব ভাষার কোনও মিল নেই। এভাবে নিজেদের ভাষা থেকে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব ভাষা সংরক্ষণের খুব একটা উদ্যোগ নেই বললেই চলে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কোনও কোনও জাতিসত্তার কাছে তাদের ভাষায় মুদ্রিত বইও নেই। তাই সব ভাষাকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত,কারণ এদেশে অন্যান্য ভাষাগুলোর কোনও স্বীকৃতি নেই।’ বঙালিদের সাৎে অন্য ভাষাগুলোও সংরক্ষণ করা হোক।’ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়নে সরকারের অনেক কাজ এখনও বাকী আছে। আগামীতে এসব বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ তিনি ব্যক্ত করেছে। জানা যায়, বাংলাদেশে বড় যে তিনটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের মধ্যে গারো,মুন্ডাসহ অনেক জাতিসত্তার নিজস্ব কোন বর্ণ নেই। তারা মাতৃভাষায় লেখার জন্য বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে। তবে চাকমা ও সাঁওতালদের নিজস্ব বর্ণ রয়েছে। তাদের মাতৃভাষায় বইও রয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার পর আর এই ভাষার ব্যবহার করা হয় না। তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া হোক। সরকারের হিসাব অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে ৫০ টির অধিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের সবার নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে এ জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ঘটবে, এবং নিজের ভাষার মাধ্যমে একজন মানুষ শিক্ষাটা অনুধাবন করতে পারবে। এরপর সে বাংলা ভাষা পড়লে সেটা তার পক্ষে বোঝা সহজ হবে। যতদিন ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসহ অন্য জাতিগুলোর ভাষার মর্যাদা না দেওয়া হবে, ততদিন এসব শুধু শ্লোগানই হবে, কার্যকর কিছু হবে না। এসময় কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্পাদক আহমেদুজ্জামান আলম, সাংবাদিক রুহুল ইসলাম হৃদয় সহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। পরে ললিতকলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ