৭:০ ৪ অপরাহ্ণ

হ.'ত্যা'কা'ণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি জকিগঞ্জের ব্যবসায়ী নোমানের মেয়ের
জকিগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জে হ'.ত্যা'কা'ণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী নোমান আহমেদ হ.'ত্যা'র নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তাঁর মেয়ে ও হ.'ত্যা মা'মলার বাদী জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মূল ঘটনা আড়াল করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
তাই মামলাটি সিআইডি অথবা পিবিআইকে দিয়ে তদন্তের আহ্বান জানান মুন্নী। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নোমানের মেয়ে জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টার দিকে তার বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে যান। ১০টার দিকে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দুপুরে খাওয়ার পর মা-বাবা সিলেট যাওয়ার কথা ছিল। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর একটি স্বত্ব মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু দুপুর ১২টার পর থেকে বাবাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।
আড়াইটার দিকে ফুফাতো ভাই তাজুল ইসলাম দোকানে গিয়ে দেখেন শাটার খোলা, কিন্তু বাবা নেই এবং তাঁর ফোন অন্য এক দোকানে চার্জে রাখা ছিল। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে না পাওয়ায় মুন্নী বাবা নিখোঁজের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রাত আনুমানিক ৯টার দিকে তুহিন নামে এক যুবক জানান, তিনি সকাল ১১টার দিকে শায়লা স্মৃতি হাসপাতালে সামনের মাঠে বাবাকে দেখেছে এবং তাঁর সঙ্গে কথাও হয়েছে। হাসপাতালের সম্মুখের কলোনির আরও দুই শিশু একই তথ্য দেয়।
কিন্তু পরদিন পর্যন্ত বাবার খোঁজ না পেয়ে জকিগঞ্জ থানায় জিডি করেন। মাঝে কিছু ইমো নম্বার থেকে তার মামা মাজেদ আহমেদ ও হানিফ উদ্দিন সুমন আহমেদের ইমো নম্বারে মুক্তিপন দাবি করা হয়। তারা একলাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হলে পুলিশ এগুলো প্রতারক বলে জানায়। বাবার খোঁজ না পেয়ে নোমানের স্ত্রী ও মেয়ে সিলেট পুলিশ সুপারের দপ্তরেও যান।
তিনি উপস্থিত না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা জকিগঞ্জ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। থানার ওসি পরদিন ১ অক্টোবর পরিবারের সবাইকে নিয়ে থানায় যাওয়ার কথা জানান। বাবার লাশের সন্ধান পাওয়ার বর্ণনা দিয়ে মুন্নী বলেন, আমরা বেলা ১১টার দিকে পরিবারসহ জকিগঞ্জ থানায় উপস্থিত হই। থানার অফিসার বলেন, তোমার বাবা আশেপাশেই আছেন, চিন্তা করো না। তোমরা খোঁজ চালিয়ে যাও, আমরাও দেখছি। এরপর বিকেল অনুমান ৪টার দিকে আমরা র্যাব-৯ এ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই শায়লা স্মৃতি হাসপাতালের কেয়ারটেকার তেরা মিয়া আমাদের বাড়িতে এসে জানান, আমার বাবা নোমান আহমদের লাশ হাসপাতালের পেছনে ধানক্ষেতে পড়ে আছে। আমরা দ্রুত ধান ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে লাশের স্থানে যাই এবং বাবার লাশ শনাক্ত করি। বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর চাচা রিয়াজ উদ্দিন, জামিল কবির, আল আমিন আলম ও তাঁর সহযোগীরা বাড়িতে হামলা চালায় অভিযোগ করে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী বলেন, চাচারা শুধু তাতে সীমাবদ্ধ নন তারা নানা অপপ্রচার-প্রগান্ডা শুরু করেন। বাবার লাশ থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তারা কেউ যাননি, হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রহণের সময়ও তারা পাশে ছিলেন না। তিনি বলেন, আমরা মহিলা মানুষ, শোকাহত-ক্লান্ত। ভেবেছিলাম- থানা পুলিশ লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় অন্তত চাচারা সাথে যাবেন। পরে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের ফেইসবুক লাইভে প্রচার করা ভিডিওতে জানতে পারি কেউ সঙ্গে যায়নি। ময়না তদন্তের পর ২ অক্টোবর সকালে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে আমি আমার বাবার লাশ গ্রহণ করি এবং গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করি এবং যাবতীয় খরচ বহন করি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য আমার চাচা প্রচার করছেন- তিনি নাকি সবকিছু করেছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার এবং নিজেকে জাহির করার অপচেষ্টা। মামলার পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে দাবি করে মুন্নী জানান, আমাদের কোনো ভাই নেই। মা মামলা করতে চেয়েছিলেন। পরে থানা পুলিশের পরামর্শে মায়ের পরিবর্তে আমি নিজে বাদী হয়েছি। শুরু থেকে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের নাম পুলিশকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আমার বাবার মৃত্যুকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। জকিগঞ্জ থানা পুলিশের আচরণও প্রশ্নবিদ্ধ, তারা তদন্তে গড়িমসি করছেন এবং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই বাবার হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও নির্ভুল তদন্ত নিশ্চিত করতে পিবিআই বা সিআইডির মাধ্যমে তদন্ত পরিচালনা করার দাবি জানান তিনি। একসঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানান মুন্নী।