৭:৩৮ অপরাহ্ণ

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রী নগরে হিন্দু পরিবারের প্রধানকে পিটিয়ে হত্যা: সম্পত্তি বেদখল ও ধর্মীয় বিদ্বেষ
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রী নগর থানার ষোলঘর সিংহের মাঝিপাড়া গ্রামের সম্পত্তি বেদখল ও ধর্মীয় বিদ্বেষের জেরে এক হিন্দু পরিবারের প্রধানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ব্যক্তির নাম কালীপদ দাস (৬৮)। তিনি উপজেলার একটি গ্রামে নিজ পৈতৃক ভিটায় বসবাস করতেন।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে বসবাসরত অবস্থায় পরিবারের এক আত্মীয় নিখোঁজ হওয়ার পর কালীপদ দাস গত জুন মাসের শেষ দিকে নিজের স্ত্রী, মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জে ফিরে আসেন। সেখানে এসে তিনি দেখতে পান তাদের চাষযোগ্য জমি স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বেদখল করে নিয়েছে এবং পরিবারের বড় দীঘিটি ভরাট করে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে।
কালীপদ দাস এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লতিফ হাওলাদারের কাছে অভিযোগ করেন। চেয়ারম্যান প্রথমে সুবিচারের আশ্বাস দিলেও, পরে তিনি বারবার গড়িমসি করতে থাকেন বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ। পরবর্তীতে ০১ আগস্ট একটি সালিশ বৈঠকের কথা জানানো হয়। নির্ধারিত দিনে কালীপদ দাস ও তাঁর স্ত্রী সালিশে উপস্থিত হলে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন স্থানীয় মাতব্বর ও চেয়ারম্যান কালীপদ দাসকে উনার ছেলে সমকামিতার অভিযোগ এনে ব্যক্তিগত ও ধর্মীয়ভাবে কটাক্ষ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈঠকের এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের উস্কানিতে কয়েকজন উগ্র স্থানীয় ব্যক্তি কালীপদ দাসকে “ধর্ম অবমাননার” মিথ্যা অভিযোগে মারধর করতে শুরু করে।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর, ৫ আগস্ট ২০২৫, সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা যান। নিহতের মেয়ে জানান, “আমার বাবা শুধু নিজের জমি ফেরত চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওরা তাঁকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলে পিটিয়ে হত্যা করে।
এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি । অন্যদিকে স্থানীয় চেয়ারম্যান লতিফ হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সালিশে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। পরবর্তীতে কী হয়েছে আমি জানি না।” অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ফ্রান্সে অবস্থানরত কালীপদ দাসের ছেলে গোপাল দাসের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি । এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।