সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০ ২৪
স্টাফ রিপোর্ট:
২ নভেম্বর ২০ ২৪
৮:০ ৬ অপরাহ্ণ

ওসমানীনগরে মজনু চেয়ারম্যান চক্রের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে জমি জবরদখল চেষ্টার অভিযোগ

ওসমানীনগরে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মজনু মিয়া ও তার চক্রের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যপ্রবাসীর জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ ওঠেছে।

আদালতে জালিয়াতি প্রমাণ হলেও দলীয় প্রভাব কাটিয়ে পার পেয়ে গেছেন তারা। তাই, এই চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চান ভুক্তভোগী পরিবার।

শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা আড়াইটায় সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন, প্রবাসী আব্দুল মুত্তালিব বারীর ভাতিজা ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকার গদিয়ারচর গ্রামের মৃত আহমদ আলীর ছেলে মো. শাকির আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, চাচা আব্দুল মোতালিব বারী পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে থাকেন। বিদেশে থাকায় তিনি দেশের খোঁজখবর কম জানেন।

এই সুযোগে আওয়ামী লীগ নেতা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মজনু মিয়া, তার ছেলে মো. শারদুল মিয়া এবং যুবলীগ নেতা মো. হেলাল মিয়া মিলে একটি চক্র গড়ে তুলে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬ শতক জমি দখলের চেষ্টা করেন।

এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আব্দুল মোতালিবের বাবা আব্দুল বারী ১৯৬৬ সালে স্থানীয় নিরুপমা দেব নামে সনাতন ধর্মী এক নারীর কাছ থেকে গোয়ালাবাজারের পাশেই কালাসারা দত্তগ্রাম জামে মসজিদের পশ্চিমে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ৩৬ শতক জমি ক্রয় করেন।

তার মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে বাটোয়ারানামা দলিলের মাধ্যমে এই জমির মালিক হন তার ছেলে আব্দুল মোতালিব। মোতালিব দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় বিএস জরিপের কাজ শুরু হলে এই ৩৬ শতক ভ‚মি সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

প্রবাসে থাকায় বিষয়টি সে সময় আব্দুল মোতালিব জানতে পারেননি। শাকির আলী আরও অভিযোগ করেন, এই সুযোগে মজনু-হেলাল চক্র ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্বত্বাধিকারী সনদপত্র তৈরি করে। হেলালের গোয়ালাবাজারস্থ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিরত পিতবাস কপালী সরকার (২৯) নামের একজনকে পরিতোষ দেব নাম দিয়ে নিরুপমা দেবের ছেলে সাজায়।

এ লক্ষ্যে কপালী সরকার ওরফে পরিতোষের জন্ম ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি হয়েছে মর্মে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। একইভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯ সালে কপালী সরকার ওরফে পরিতোষকে নিরুপমা দেবের ছেলে বলে উত্তরাধিকার সনদপত্র তৈরি করে।

তিনি বলেন, ‘এসব ভুয়া কাগজাদির মাধ্যমে কপালী সরকার ওরফে পরিতোষের কাছ থেকে হেলাল মিয়া নিজের নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামাও ভাগিয়ে নেন। সেই আমমোক্তারনামার বলে হেলাল ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মো. শারদুল মিয়ার কাছে ৬ শতক, ২০২১ সালে ব্রা²ণগ্রামের হেলাল আহমদ মধু নামের একজনের কাছে ৬ শতক ও ২০২২ সালে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের মো. তারেক আহমদ নামের একজনের কাছে ৩ শতক ভ‚মি বিক্রয় করে দেন।’ এ অবস্থায় প্রবাসী মোতালিব ২০২২ সালে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি ১ নম্বর আদালতে মামলা দায়ের করেন। তদন্তের জন্য আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশ দেন।

পিবিআই’র তদন্তে জালজালিয়াতি ও কপালী সরকার ওরফে পরিতোষ নিরুপমা দেবের ছেলে নয় বলে প্রমাণ হয়। এই মামলায় অভিযুক্ত শারদুল ও হেলালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সংবাদ সম্মেলনে শাকির আলী আরও জানান, পিতবাস কপালী যুবলীগ নেতা হেলালকে প্রধান আসামি করে কয়েক জনের বিরুদ্ধে সিলেট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি ১ নম্বর আদালতে (ওসমানীনগর) প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিলেটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশকে দায়িত্ব দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলে।

পিতবাস কপালী ছাড়াও আরও দুটি ভ‚মি দখল ও জালিয়াতি মামলা রয়েছে যুবলীগের হেলালের বিরুদ্ধে। এই দুই মামলায় প্রায় ৬ মাস করে জেলও খেটেছেন তিনি। শাকির আলী বলেন, এই চক্রের অপকর্ম মোকাবিলা করতে গিয়ে আমার প্রবাসী চাচা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতিতে পড়েছেন।

অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় আমার চাচা এবং আমরা মুখ খুলতে পারিনি। তিনি ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ