শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০ ২৪
বিজ্ঞপ্তি::
২২ জুন ২০ ২২
১০ :২৩ অপরাহ্ণ

শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তির সুবিধার জন্যই পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে উত্তরপূর্বাঞ্চলের মানুষ

সিলেট জেলায় শতাব্দীর এই ভয়াবহ বন্যার চলমান রয়েছে। সিলেটের মানুষ অসহায় হয়ে চরম দুর্ভোগের মাঝে সময় পার করছে। এই সময়ে প্রতিদিনের মত আজও আমাদের জেলার কোন না কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানবাসী মানুষদের পাশে থাকার কথা ছিল, এখানে আসার আগেও আমরা ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে ছিলাম, এই সংবাদ সম্মেলনের পরও আমরা ছুটে চলব বন্যার্থদের পাশে।

তার পরও এই কঠিন সময়ে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের সামনে আসতে হলো। সিলেটের মানুষ যখন অসহায় হয়ে নিরব কান্না করছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্ঠা করছে, ঠিক তখনই দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বন্যায় বিএনপির কর্মতৎপরতা নিয়ে ঠাট্টা করছেন। সংবাদপত্রকে বলা হয় জাতির দর্পন ও সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক। সিলেটে বন্যার শুরু থেকেই বিএনপির ও অঙ্গ সহযোগী, সমমনা সংগঠন সমূহের কার্যক্রম আপনারা পর্যবেক্ষণ করছে আসছেন, আপনাদের গণমাধ্যমে তা গুরুত্বের সহিত প্রচার করে আসছেন। এজন্য সিলেট জেলা বিএনপি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

তার পরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্ছ ব্যক্তি যখন বিএনপির ত্রাণ তৎপরতাকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে উপহাস করছেন, তখন আসলে দেশের সচেতন নাগরীক হিসেবে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। আপনারা জানেন আমাদের দলের চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন বারের প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো সাজানো মামলায় গৃহবন্দি আছেন। তিনি শারিরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান মিথ্যা হুলিয়া নিয়ে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। বন্যা শুরুর পর থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সিলেট জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে শুরু থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানবাসিদের দারে দারে যাচ্ছি, দলের সাধ্যমত ত্রাণ, নগদ অর্থ এবং তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছি।

আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছেন। বার বার বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ আপডেট নিচ্ছেন। সিলেটবাসীর খবর রাখছেন। আমরা গতকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ২ শত পরিবারকে ত্রাণ ও শুকনো খাবার, ১ লক্ষ ৯৩ হাজার জনকে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং ১১ হাজার ৩ শত পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। এই পরিমান সময়ে সময়ে আরো বাড়বে। তার পরও যখন প্রধানমন্ত্রী বিএনপির এসব কার্যক্রম দেখতে পান না তখন তা দেখার দায়িত্ব সিলেটবাসী সহ দেশবাসীর কাছে ছেড়ে দিলাম। সরকার ও আওয়ামী লীগ বলছে- এটি প্রাকৃতিক বন্যা। আসলে এটি প্রাকৃতিক বন্যা নয়। এটি মানবসৃষ্ট বন্যা। আমরা গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি যে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ জেলায় বন্যার মূল কারণ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ীতে যাতায়াতের জন্য হাওয়রের বুক চিরে নির্মিত ৮৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অপরিকল্পিত ভাবে ৭৭ কিলোমিটার রাস্তা। এরমধ্যে হাওরাঞ্চল বাঁধ রয়েছে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ। শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তির সুবিধার জন্যই পানিতে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই বিশাল জনগোষ্টিকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা থেকে শুরু করে সিলেট (সুরমা) বেসিন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্লাবনভূমি। এই ভূমি দিয়ে পূর্ব ভারত দিয়ে আসা নদী ও বৃষ্টির ঢল নেমে আসে। বাংলাদেশের অন্যতম এক প্রাণভোমরা এই হাওর। পরিবেশবিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদ ড. খালেকুজ্জামানের ভাষায়, ‘হাওর ১৪০ প্রজাতির মাছের প্রজননক্ষেত্র; ২০৬ প্রজাতির পাখি, ২০০ প্রজাতির গাছ, ৩৪ প্রজাতির রেপটাইল এবং ৩১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বাস এই হাওরে। হাওরের জীববৈচিত্র্যের তুলনা একমাত্র সুন্দরবন। প্রতিবছর ৬০ হাজারের বেশি পরিযায়ী পাখি হাওরে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। সুন্দরবনের মতোই টাঙ্গুয়ার হাওর ইউনেসকোর গুরুত্বপূর্ণ রামসার সাইট আর হাকালুকি হাওরটি এখন রামসার সাইট হিসেবে বিবেচনাধীন। বাংলাদেশের মোট ধান উৎপাদনের ১৬ শতাংশই হাওর অঞ্চল থেকে আসে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বড় অংশীদার হাওর অঞ্চল। হাওরের ভূমি দেশের ভূগর্ভস্থ পানির বড় আধার। হাওরের জলাভূমির মাটি ধরন এবং জলজ উদ্ভিদের প্রাবল্যের কারণে তা বন্যার প্রবণতা হ্রাসে সহায়তা করে এবং রাসায়নিক দূষণ শুষে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া ইতিহাসের বিবেচনায় এটাও সুবিদিত যে হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অবারিত খোলা প্রান্তর মানুষের আত্মিক ও মননশীল জীবন গঠন এবং সংস্কৃতিচর্চায় ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশ ভরে গেছে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় পৌর্তিক কাজ দিয়ে। ভারতীয় নদীবিশেষজ্ঞ প্রশান্ত মহলানবীশ সেই ১৯২৭ সালেই বলেছিলেন, বাঁধের ফলাফল হিসেবে তলানি জমে নদীতল ধীরে ধীরে ওপরে উঠে আসবে। উন্নয়নবাদীরা শোনেননি।

এই ভূমিতে যত হাজার কোটি টাকার উন্নয়নই ঢালা হোক, তা হয় নিজে ভেসে যাবে, নাহয় লাখো মানুষকে ভাসাবে। সেটাই হয়েছে। কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৮৭৫(প্রায়) কোটি টাকা ব্যয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ীতে যাতায়াতের জন্য নির্মিত এই সড়কের কারণে ঢলের পানি হাওর থেকে নদীতে নামতে বাধা পাচ্ছে। জলাবদ্ধতায় সড়কের দুপাশে ধান খেত ডুবে থাকছে। এ পানিতে ধান পচে যায়। পরিবেশবিজ্ঞানী ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণের আগে যথাযথ পরিবেশগত সমীক্ষা চালানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘হাওরের বৈশিষ্ট্য হলো, জলের অবাধ প্রবাহ।

আমি প্রস্তাব করেছিলাম, সড়ক যদি নির্মাণ করতেই হয়, তাহলে যেন ৩০ কিলোমিটারের এই সড়কের অন্তত ৩০ ভাগ জায়গা উঁচু সেতু বা উড়াল সড়ক আকারে বানিয়ে পানি প্রবাহের সুযোগ রাখা হয়। ভুল সড়ক, ভুল বাঁধ আর অবকাঠামো নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় পানি নামতে পারছে না বলে সহনশীল বন্যা দুঃসহ হয়ে উঠেছে।ভুল সড়ক, ভুল বাঁধ আর অবকাঠামো নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় পানি নামতে পারছে না বলে সহনশীল বন্যা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে উজানে ভারতের তৈরি অজস্র বাঁধ-জলাধার, অজস্র ব্যারাজ, জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও জলকাঠামো। এসবের কারণে নদী আর পলি বইতে পারছে না। পলি বইতে না পারলে পানিও বওয়া কঠিন হয় নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায়। ফলে নদী পানি উগরে দিচ্ছে, অস্বাভাবিক বন্যা হচ্ছে। অবস্থা হয়েছে এমন, ভারতের উজানে বন্যা ১০ দিন চললে বাংলাদেশে চলে মাসের বেশি দিন। পানি নামার পথে উন্নয়নের অনেক বাধা যে! ভারতীয় নদীবিশেষজ্ঞ প্রশান্ত মহলানবীশ সেই ১৯২৭ সালেই বলেছিলেন, বাঁধের ফলাফল হিসেবে তলানি জমে নদীতল ধীরে ধীরে ওপরে উঠে আসবে। উন্নয়নবাদীরা সে সময়ের এক বড় বন্যা ছিল ১৯৪৩ সালের দামোদরের বন্যা। পবন দাস বাউলের গাওয়া বিখ্যাত গান, ‘বসুন্ধরার বুকে বরষারই ধারা, তারা ভরা হাহাকার’ সে বন্যা নিয়েই তৈরি করেছিলেন কোনো অজ্ঞাত শিল্পী। ওই সময় ‘ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান’ লিখেছিল, ‘বন্যার জন্য দায়ী নদ-নদী নয়, অতিবৃষ্টি নয়, দায়ী ব্রিটিশের তৈরি রেলপথ’।

জলকে বাঁধ দিয়ে ঘিরে রাখা এবং সেই বাঁধ ভেঙে পড়ার ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে নিন হাওরে সড়ক নির্মাণ করার ঘটনাকে। এখন সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বন্যার পানি নামাতে প্রয়োজনে সড়ক কেটে দিন। কাটবেনই যদি তবে বানিয়েছিলেন কেন? বানালেনই যদি তবে ঘন ঘন কালভার্ট করেননি কেন? ২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভেঙে পড়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ইঁদুরকে দায়ী করেছিল। অথচ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল পাউবোর অনিয়ম আর ঠিকাদারদের দুর্নীতির কথা। স্থানীয় যুবলীগ নেতা এক ঠিকাদারকে আটকও করা হয়েছিল বিমানবন্দর থেকে। এবার সব নিশ্চুপ। শুধু আসামের বৃষ্টিকে দুষলে হবে না, গত এক যুগে হাওর ও সিলেটের জলপ্রবাহের ওপর কী কী অনাচার করা হয়েছ, তার তালিকা বের করতে হবে। দায়ীদের এবং তাদের ভুল উন্নয়ন দর্শনকে একসঙ্গে পরিত্যাগ করতে হবে। ঠিক; এখন ত্রাণের সময়, উদ্ধারের সময়। উদ্ধারকাজে নৌকা মিলছে না, যে দেশে-বিদেশে সাঁতার শিখতে, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার বসানো দেখতে, সাক্ষাৎকার নেওয়া শিখতে এমনকি চাদর কেনাকাটা করতেও বিদেশ সফরে শত শত কোটি টাকা অপচয় হয়, সেখানে ত্রাণের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকবে না কেন? কেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গেয়ে ত্রাণ ভিক্ষা করতে হবে? কোন সাহসে সিলেটের নৌকার মালিকেরা দুর্গত মানুষকে জিম্মি করে ২০০ টাকার নৌকাভাড়া ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন? না দিলে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ফেলে যান? এসব মাঝিদের কাজ নয়, নৌকার মালিকদের কারসাজি। মালিকেরা এমনই হয়, দুর্যোগ তাঁদের আরও বড় মালিক বানায়।

এটা আত্মসমালোচনারও সময়। এখনই যদি আমরা দোষ ও দোষীদের চিনতে না পারি, শীতকালে তো সব ভুলে যাব। ন্যায়ের কথা ও দায়ের কথা বলার এটাই সময়। সিলেটের বন্যার প্রকৃত পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী সহ রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে না। সিলেটে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব সরকারী ভাবে দেয়া হয়েছে বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক ভিন্ন। বাস্তবে সিলেটের অবস্থা আরো ভয়াবহ। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় আওয়ামীলীগের এক নেতা সাংবাদিকদের উপর ক্ষোভ ঝেড়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন- 'সাংবাদিকরা বন্যার যে ভয়াবহতা প্রচার করেছেন সিলেটে নাকি তার কিছুই হয় নি'। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে তারা এখন সাংবাদিকদের উপরও ক্ষেপেছেন। কারন সাংবাদিকরা সিলেটের প্রকৃত অবস্থা গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আওয়ামীলীগ এখন স্বাধীন সাংবাদিকতায়ও হস্তক্ষেপ করতে চায়। তারা সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। আপনারাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেছেন এই অঞ্চলে চলতি বন্যায় এপর্যন্ত পানিতে ডুবে এবং পাহাড় ধসে ২৩ জনের প্রাণহানী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সিলেট সফর করেছেন। আজ দৈনিক যুগান্তর লীড নিউজের শিরোনাম করেছে 'দুর্যোগে ত্রাণ অপ্রতুল দুর্ভোগ ভয়াবহ'।

আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- আর কত প্রাণহানী হলে আওয়ামী লীগের দৃষ্ঠিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে? আমরা প্রথম দাপের বন্যায় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম- বন্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা, দুর্গতদের দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য সহায়তা প্রদানপূর্বক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু সরকার তাতে কর্নপাত করেনি। যার ফলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় দফায় বন্যায় আমাদেরকে দিশেহারা হতে হয়েছে।

আমরা আবারো সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি, দুর্গতদের দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য সহায়তা প্রদানপূর্বক পুনর্বাসন করুন। মানবসৃষ্ট বন্যা থেকে মুক্তির জন্য বন্যার কারন খোঁজে বের করে নদী ড্রেজিং সহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করুন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী সিলেটে বলেছেন, 'সিলেট নিম্নাঞ্চল, যেকারনে হওরাঞ্চলে আর কোন উচুরাস্তা নির্মাণ করা হবেনা। এখানে ফ্লাইওয়ার ও এলিভেটেট এক্সপ্রেস নির্মাণ করা হবে।' এটিও আসলে একটি মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্ণীতির তৈরি করা। আপনারা জানেন পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে দুর্ণীতির কারনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করা থেকে সরে গিয়েছিল। আর আওয়ামীলীগ নিজেদের দুর্ণীতি ঢাকতে গিয়ে পদ্মা সেতু করার জন্য দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে নিয়ে এসেছে। বার বার ব্যায় বাড়িয়ে এখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।

এখন সিলেটকে বিক্রি করে তারা মেগা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাতের পায়তারা করছেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দেশের একটি বৃহত্তর অঞ্চল যখন পানির নিচে তলিয়ে আছে, প্রতিনিয়ত যখন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, নৌকার অভাবে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধা করা যাচ্ছেনা, বানবাসি মানুষ খাবার পাচ্ছেনা, বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেনা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেনা, তখন সরকার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী শিল্পিদের এনে অনুস্টানের নামে পানিবন্দি মানুষদের সাথে উপহাস করছে। দেশের জনগন সময়মত এক দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের ব্যবাসায়ী নেতৃবৃন্দ সহ সর্বস্থরের ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানাতে চাই, ব্যাবসায়ী ভাইয়েরা যেন সিলেটবাসীই এই মহা দুর্যোগে মুনাফার চিন্তা না করে, সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে বন্যার্থদের পাশে দাঁড়ান। এই চলমান বন্যার সময়ে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন।

এই সময়ে চুর ও ডাকাতদের উৎপাত বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে মানুষের জান মালের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা সব শেষে আপনাদের মাধ্যমে, গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও তার দল আওয়ামী লীগকে বলতে চাই- এখনো সময় আছে, চোখের রঙ্গিন চশমা খুলুন, দেশের বাস্তব চিত্র দেখুন। কানের তালা খুলুন, জনগনের মনের ভাষা শুনুন। দেশের জনগন আর আপনাদের চায় না। জনগন নিজেদের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে দেশ পরিচালনায় দেখতে চায়, জনগন ভোট দিতে চায়, জনগন স্বাধীন ভাবে কথা বলতে চায়। তাই জিয়া পরিবার ও বিএনপির সমালোচনা বাদ দিয়ে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিন।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ