৩:০ ২ অপরাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশে তিন যুগ - এস ডি সুব্রত
বাংলা ভাষাবিদ ও তাত্ত্বিকদের সুগভীর চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা লব্ধ ফল থেকে আমরা জানতে পারি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস। গবেষণায় নানা মতের উদ্ভব হয়েছে। আমাদের এটা মানতে হবে যে বাংলা ভাষা সাহিত্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন নেই।অনুমান নির্ভর ও গবেষণা লব্ধ ফল থেকেই প্রমাণ।
আমরা বাঙালি । আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষায় সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।ইন্দো- ইউরোপীয় ভাষা পরিবারে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ এবং বিশ্বে ষষ্ঠ এবং ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা হিসেবে সপ্তম।
মানুষের নিজের ভাষা তার কাছে মেঘগলা বৃষ্টির জলের মতো। বাঙলা ভাষা ছাড়া থেমে যায় বাঙালির জীবন।ব্রাহ্মী লিপি থেকে বাংলা লিপি বা অক্ষর সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়। কোন ভাষাই শুধু নিজের ভাষা দিয়ে চলে না। দরকার হয় অন্য ভাষার শব্দ। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রবেশ করেছে আরবী,ফারসি ইংরেজি তুর্কি ভাষা।
সাহিত্য হচ্ছে আলোর পৃথিবী। সেখানে যা আসে তাই আলোকিত হয়ে আসে। অসুন্দর হয় সুন্দর। কালো হয় নীল।
লিখন শিল্পকে এক কথায় সাহিত্য বলা যায়। মোট কথা ইন্দ্রিয় দ্বারা জগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা অনুভূতি সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত প্রকাশ হচ্ছে সাহিত্য। সাহিত্য কে প্রধানত তিন ধারায় ভাগ করা যায়। গদ্য,পদ্য ও নাটক। গদ্যের মধ্যে আছে প্রবন্ধ ,নিবন্ধ ও গল্প। পদ্যের মধ্যে আছে ছড়া কবিতা।
আমাদের মুখের ভাষা বাংলা। আমাদের সাহিত্য হচ্ছে বাংলা।আর বাংলা ভাষায় লিখিত সাহিত্য হচ্ছে বাংলা সাহিত্য।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সাহিত্য এগিয়ে যায় । সাহিত্যের জগতে আসে নতুন ঋতু। বদলে যায় সাহিত্যের রুপ।
দশম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে রচিত হচ্ছে বাঙলা সাহিত্য। বাঙলা সাহিত্যের বয়স আনুমানিক এক হাজার বছরের বেশী। হাজার বছরে বাঙলা সাহিত্য কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিয়েছে। এগুলো কে বিভিন্ন যুগে ভাগ করা যায়।
বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন যুগের সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যের কালের বিচারে বাংলা সাহিত্য কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১ । প্রাচীন যুগ(৯৫০- ১২০০খ্র.)
২ ।মধ্যযুগ(১৩৬০- ১৮০০ খ্রী )
৩ । আধুনিক যুগ(১৮০০-...)
অন্ধকার যুগ ( ১২০০- ১৩৫০ খ্রী.)
আরেকটি যুগের কথা পাওয়া যায় ।সেটি হল অন্ধকার যুগ।এ যুগে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য কোন রচনা পাওয়া যায় নি
১। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ:
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একটি বই হচ্ছে চর্যাপদ। চর্যাপদ হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন বা প্রথম বই।হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর চর্যাপদ আবিষ্কারের আগে আদি বা প্রাচীন বাংলা ভাষার রুপের কথা কেউ জানতো না। চর্যাপদ আবিষ্কারের মাধ্যমে বাঙালি দেখতে পায় আদি বাঙলা ভাষার রুপ।মহামহোপাধ্যয় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে আবিস্কৃত হয় বাঙলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ নেপালের রাজদরবার থেকে। চর্যাপদের পদগুলোর রচনা কাল আনুমানিক সপ্তম শতক থেকে দ্বাদশ শতকে পর্যন্ত। চর্যাপদের রচয়িতা ছিলেন বৌদ্ধ সাধকগন। এখানে বৌদ্ধ সাধনার কথা বর্ননা করা হয়েছে। এ যুগের কবি রা হলেন লুইপাদ,কাহ্ণপদ ,সরহপাদ,চাটিল্যপাদ ....প্রমুখ। চর্যাপদের সাথে আরো দুটি বই আবিষ্কার হয়। এগুলো হল ডাকার্নব ও দোহাকোষ। চর্যাপদে ৪৭ টি পূর্ণ কবিতা এবং একটি ছেঁড়া কবিতা। এতে সাড়ে ছেচল্লিশ টি কবিতা আছে। চব্বিশ জন বৌদ্ধ বাউল সাধক এসব কবিতা রচনা করেন। এরা বাংলা ভাষার প্রথম কবিকুল।কাহ্নপাদ বা কৃষ্ণাচার্যের সর্বোচ্চ বারটি কবিতা রয়েছে চর্যাপদে। এগুলো হচ্ছে বৌদ্ধ সহজিয়াদের ধর্ম তত্ত্ব ও সাধন ভজনমূলক রচনা। চর্যাপদে বৌদ্ধ সাধকরা তাদের সাধনার গোপন কথা বলেছেন। মনের ছোঁয়ায় তাতে লেগেছে সাহিত্যের নানা রঙ রস। চর্যাপদের কবিরা সকলের জন্য সাহিত্য রচনা করেন নি, করেছিলেন নিজেদের জন্য।এর ভাষা ও বিষয়বস্তু আজো দূর্বোধ্য। চর্যাপদের আরো কতগুলো নাম রয়েছে।কেউ বলেন চয্যাচর্য্যবিনিশ্চয়। আবার কেউ বলেন চর্য্যাশ্চরয্যবিনিশ্চয়। আজকাল এর মনোরম নাম হল চর্যাপদ।
চর্যাপদের একটি কবিতা এরকম---
পারত মোর ঘর নাহি পড়বেষী।।
(টিলার উপর আমার ঘর। আমার কোন প্রতিবেশী নেই)
হাড়িত ভাত নাই নিতি আবেশী
( হাঁড়িতে আমার ভাত নাই, প্রতিদিন উপোস থাকি)
বেঙ্গ সংসার বডহিল জাঅ।
(ব্যাঙের মত প্রতিদিন আমার সংসার বাড়ছে)
দুহিল দুধ কি বেন্টে মায়ায়।।
(যে দুধ দোহানো হচ্ছে তা গাভীর বাঁটে ফিরে যাচ্ছে)
এখন আমরা কবিতা পড়ি।আর চর্যাপদের কবিরা কবিতা গাইতেন। পাঠকেরা চারপাশে বসে শুনতে।
বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ:
চর্যাপদ রচিত হওয়ার পরে বাঙলা সাহিত্যে নেমে আসে এক করুন আঁধার।সে আঁধার টিকেছিল প্রায় দেরশ বছর। এ সময়টির দিকে তাকালে কোন আলোর সন্ধান পাওয়া যায় না।১২০১- ১৩৫০ খ্রী. পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে কোন উল্লেখযোগ্য রচনা পাওয়া যায় নি।এজন্য এ সময়কে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়।এযুগের প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৩শ- ১৪ শ শতকের রামাই পন্ডিতের গাঁথা জাতীয় রচনা শূন্য পূরাণ। এতে বৌদ্ধ দের উপর বৈদিক ব্রাহ্মণ দের অত্যাচার, মুসলমানদের জাজপুর প্রবেশ ইত্যাদি সংক্রান্ত 'নিরঞ্জনের রুষ্মা' শীর্ষক একটি কবিতা আছে।
২।বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ:
অন্ধকার যুগের অবসানে শুরু হয় মধ্যযুগ। বাঙলা সাহিত্যে জ্বলে উঠে আলোর শিখা।এ সময় বাংলা সাহিত্য তিনটি প্রধান ধারায় বিকশিত হয়েছে----- বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গল সাহিত্য ও অনুবাদ সাহিত্য। মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ফসল হচ্ছে এক দীর্ঘ অসাধারণ কাব্য যার নাম শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন বা বৈষ্ণব পদাবলী।কৃষ্ণ ও রাধার কাহিনী রাধাকৃষ্ণের বেশে নিজেদের আবেগ প্রকাশ পেয়েছে বৈষ্ণব পদাবলী তে। বডু চণ্ডীদাস এ সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি।যার কাব্যের রচনা কাল ১৩৫০ খ্রী. বলে ধরা হয়। কবি বডু চণ্ডীদাস বাঙলা ভাষার প্রথম মহাকবি। মালধর বসু কৃষ্ণ লীলা বিষয়ক উপাখ্যান শ্রীকৃষ্ণ রচনা করেন ১৪৮০ খ্রী. এ।এই কাব্যের জন্য গৌড়েশ্বর তাকে গুনরাজ খাঁ উপাধি দেন।
এ সময় মুসলমান কবিরা রচনা করেন বিভিন্ন কাব্য।ইউসুফ জুলেখা,লাইলী মজনু এ সময়ের অন্যতম রচনা। এখানে দেবদেবীর পরিবর্তে প্রাধান্য পায় মানুষ। যদিও এ মানুষ কল্পনার সৃষ্টি।মুসলমান কবিদের মধ্যে শাহ মুহাম্মদ সগীর উল্লেখযোগ্য।
জৈনুদ্দিন রচনা করেন রসুল বিজয়।দোনা গাজীর বিখ্যাত কাব্য সয়ফুল মুলুক বদিউজ্জামাল। শেখ ফয়জুল্লাহ রচনা করেন গোরক্ষ বিজয়, গাজী বিজয়। মুহাম্মদ কবির রচনা করেন
মধুমালতি,আলাওল রচনা করেন বিখ্যাত কাব্য পদ্মাবতী। মধ্যযুগের একজন অন্যতম কবি আব্দুল হাকিম।নূরনামা , কারবালা তার বিখ্যাত কাব্য।নূর নামা কাব্যের বঙ্গভাষা কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রমান পাওয়া যায়------
" যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবানী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।"
এ যুগের উল্লেখযোগ্য অনুবাদ সাহিত্য রামায়ন রচনা করেন কৃত্তিবাস ওঝা।বডু চণ্ডীদাস এর পর তিনি বাংলা সাহিত্যের বড় কবি।১৮১৫-১৯ সালে মহাভারতের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর।কাশীরাম দাস মহাভারত রচনা করেন ১৬০২- ১০ খ্রী.।
এর পর আসে মঙ্গল কাব্য। কাব্যের সময়টাতে কাব্যের মাধ্যমে দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের দ্বারা মঙ্গল কামনা করা হয় বলে এগুলো মঙ্গল কাব্য।কারো মতে এ কাব্যগুলো এক মঙ্গলবার বার থেকে আরেক মঙ্গলবার পর্যন্ত গাওয়া হতো বলে এগুলো মঙ্গল কাব্য বলা হয়।
মঙ্গল কাব্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মনসা মঙ্গল।
মনসা মঙ্গলের কবিরা হলেন হরিপদ দত্ত,নারায়ন দেব ,বিজয় গুপ্ত। মনসা দেবীর পূজা প্রচরের জন্যে যে কাব্য রচিত হয় তা মনসা মঙ্গল। মনসা দেবীর ছিল একচোখ কানা। আবার সে মেয়ে।তার ইচ্ছে হয় সমাজের অভিজাত চাঁদ সওদাগরের পূজো পাওয়ার। চাঁদ সওদাগর ছিল বড় ধনী, প্রচুর অর্থের মালিক। চাদ সওদাগর মনসা দেবীর পূজা করতে রাজি হয়নি।সে একচোখা কানা ও মেয়ে মনসা দেবীর পূজা করতে নারাজ। মনসা রেগে গিয়ে চাঁদের বানিজ্য তরী সপ্তডিঙ্গা ডুবিয়ে দেয় এবং চাঁদ সওদাগরের ছেলে লখিন্দর কে বাসর ঘরে সাপ দিয়ে মেরে ফেলে।অবশেষে চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীর পূজা দেয়। তবু চাঁদের অহমিকা থামেনি।সে বাম হাতে দেবীকে ফুল দিয়েছিল পূজার সময়। মনসা মঙ্গলের কাহিনী বেহুলা লখিন্দর এর।চাঁদের আরো ছয় পুত্রকে মেরে ফেলেছিল মনসা দেবী। চাঁদও এক সময় স্বর্গে ছিল। মনসার অভিশাপে মর্তে এসে জন্ম নেয়।
চন্ডীমঙ্গল কাব্য উৎকর্ষের জন্য বিখ্যাত। দেবী চন্ডীর পূজা প্রচরের জন্যে যে কাব্য রচিত হয় তা হল চন্ডীমঙ্গল। চন্ডীমঙ্গলের কবিরা হলেন মানিক দত্ত দ্বিজ মাধব,মুকুন্দ রাম, ভারতচন্দ্র। চন্ডীমঙ্গল এর দুটি চমৎকার কাহিনির মধ্যে একটি হচ্ছে কালকেতু ও ফুল্লুরর। স্বর্গে কালকেতুর নাম ছিল নীলাম্বর আর ফুল্লুরার নাম ছিল ছায়া। সুখেই বসবাস করছিল। চন্ডী দেবীর পৃথিবীতে পূজা পাওয়ার ইচ্ছা জাগে। চন্ডীর ছলনায় শিবের অভিশাপে নীলাম্বর দেবত্ব হারিয়ে মর্ত্যলোকে জন্ম নেয় ধর্মকেতু নামক এক ব্যাধের ঘরে।নাম হয় কালকেতু। অন্যদিকে ছায়া জন্ম নেয় অারেক ব্যাধের কন্যা হয়ে ,নাম হয় ফুল্লুরা। আবার দেবী চন্ডীর চক্রান্তে পড়ে দেবীর পূজা করে কালকেতু ও ফুল্লুরা।
ধর্ম মঙ্গলের আদি কবি ময়ুর ভট্র, সীতারাম ও ভারত চন্দ্র। এছাড়াও কৃষ্ণ রাম দাসের শীতলা মঙ্গল ও ষষ্ঠী মঙ্গল কাব্যের কথাও জানা যায়।
অন্নদা মঙ্গলের প্রথম খন্ডে শিব পার্বতীর প্রেমের পৌরনিক ও লৌকিক দুটি চরিত্র ই তুলে ধরা হয়েছে।তবে উভয়েই দেবত্বের তুলনায় কাহিনী প্রবাহে মানব জীবনের প্রভাব প্রচ্ছন্ন। অন্নদা মঙ্গলের দ্বিতীয় খন্ডে বর্ধমানের রাজকন্যা বিদ্যা ও কাঞ্চীর রাজকুমার সুন্দরের প্রনয়কাহিনী রচনায় ভারত চন্দ্রের কৃতিত্ব উল্লেখযোগ্য।
আঠারো শতকের অন্যতম লোকগাথা ময়মনসিংহ গীতিকা সংগ্রহ করেন দীনেশ চন্দ্র সেন
৩। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ: মধ্যযুগের অবসানে আসে আধুনিক যুগ।উনিশ শতক বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ। প্রাচীন ও মধ্যযুগে গদ্য ছিলনা।গদ্য আধুনিক যুগের ফসল।উনিশ শতক হল বাংলা সাহিত্যের নব জাগরণের যুগ। এ সময় বাঙালি প্রতিভার বিকাশ ঘটে।উনিশ শতকে বিকশিত হয় বাংলা সাহিত্যের সব শাখা। বাঙলা সাহিত্য হয়ে
উঠে সম্পুর্ন সাহিত্য। মানুষ যখন যুক্তিতে আস্থা আনে,যখন আবেগ কে নিয়ন্ত্রন করে,যখন মানুষ মানুষকে মূল্য দিতে শিখে তখন মানুষ হয়ে উঠে আধুনিক। আধুনিক যুগে সাহিত্যের রুপ বদলে যায়।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে বিদেশীদের অবদান অসামান্য।ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকরা নতুন করে গড়ে তুলেন বাংলা গদ্য।এ গদ্য বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার পথকে সুগম করে। গদ্যের বিকাশের ফলে বাংলা সাহিত্য জগতে দেখা দেয় নতুন বৈচিত্র্য।ফোর্ট উইলিয়াম এর সাথে আরও কয়েকজন পন্ডিত এ কাজে মনোযোগ দেন। এরা হলেন রাম রাম বসু , মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার সহ আরো কয়েকজন।রাজা রাম মোহন রায় রচনা করেন বেদান্ত গ্রন্থ,বেদান্ত সার গৌড়ীয় ব্যাকরণ।
আধুনিক যুগের প্রথম মহাকাব্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বধ।প্যারীচাদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস। আধুনিক বাংলা গদ্যের প্রধান রুপকার ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলা গদ্যের জনক বিদ্যাসাগর নানা ভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করেন। বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের ছন্দ আবিস্কার করেন। বিদ্যাসাগরের বিখ্যাত গ্রন্থ বেতাল পঞ্চবিংশতি,বাঙলার ইতিহাস।
রাজা রামমোহন রায় বাংলা গদ্যের আঠামো নির্মাণ করে দিয়ে যান।আর ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর তাতে প্রাণ সঞ্চার করে অনুপম সৌন্দর্য সংযোজন করেন। প্রবন্ধ এর ক্ষেত্রে উপযুক্ত গদ্য রচনা করেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়।
বিদ্যাসাগরের পরে আসেন প্যারীচাদ মিত্র, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এর আরো পরে আসেন রবীন্দ্রনাথ,প্রমথ চৌধুরী।আসেন বিহারী লাল চক্রবর্তী,মীর মোশাররফ হোসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ বুদ্ধদেব বসূ , বিষ্ণু দে,অমিয় চক্রবর্তী।
গদ্যের পর আসে কবিতার রাজত্ব।উনিশ শতকের প্রথমার্ধে র একমাত্র কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত।তার কবিতা ছিল হাল্কা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ এর। তিনি পুরোপুরি ভাবে আধুনিকতাকে গ্রহন করতে পারেন নি। এরপর আসেন রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়। তিনি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের চেয়ে আধুনিক।তার বিখ্যাত কাব্য পদ্মিনী উপাখ্যান। মহাকবি কায়কোবাদ রচনা করেছিলেন মহাকাব্য মহাশ্বশ্বান।এটা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধ নিয়ে রচিত। বিহারী লাল চক্রবর্তী বাংলা কবিতায় রোমান্টিক ধারা আনেন।তাক বলা হয় বাংলা কাব্যের ভোরের পাখি।
১৮৫২ সাল বাংলা নাটকের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা। বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক নাটক ভদ্রার্জুন লেখেন তারাচরন শিকদার।তারপর যোগেন্দ্র চন্দ্র গুপ্তের কীর্তি বিলাস। পঞ্চাশের দশকে বাঙলা নাটকের অমর পুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্ত লেখেন শর্মিষ্ঠা,, পদ্মাবতী, কৃষ্ণ কুমারী।তারপর দীনবন্ধু মিত্র লেখেন নীল দর্পণ,সধবার একাদশী। গিরিশ চন্দ্র ঘোষ লেখেন সিরাজদ্দৌলার,মীর কাশিম। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লেখেন কল্কি অবতার,প্রতাপ সিংহ।
।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ এভাবেই চলতে থাকে । বাংলা সাহিত্য শুরু হয়েছিল আজ থেকে হাজার বছরেরও বেশী আগে।টিকে থাকবে আরো অনেক শতক। নতুন নতুন রুপ নেবে বাংলা সাহিত্য।এক সময় হয়তো বাংলা সাহিত্য আরেক নতুন রুপ নেবে যা আমরা আজ কল্পনা করতে পারছিনা।
লেখক: কবি ও গীতিকার।
পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, সুনামগঞ্জ।
তথ্যসুত্র:১। বাংলা সাহিত্যের কথা- মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
২।কতো নদী সরোবর- হুমায়ূন আজাদ।
৩। সাহিত্য ও সংস্কৃতি- আহমদ শরীফ।
৪। লাল নীল দীপাবলি- হুমায়ূন আজাদ।
৫। ভাষা শিক্ষা- হায়াৎ মামুদ।