৫:০ ৫ অপরাহ্ণ
দুদক ও বিচার আ.লীগের দাসে পরিণত হয়েছিল: আইন উপদেষ্টা
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিচার বিভাগ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সোমবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সময় ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছিল। আমরা দেখলাম এক বেহায়া প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনার) পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ’ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের বিভিন্ন দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘দুদক তো ছিল, উচ্চ আদালতও ছিল, কোনো বিচার হয়েছে? কিচ্ছু বিচার হয়নি। বিচার কার হতো, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার।
তিন কোটি টাকা একটা জায়গায় রেখেছেন। প্রক্রিয়াগত ভুলের জন্য। একটা টাকা সেখান থেকে কেউ আত্মসাৎ করেনি। আত্মসাৎ করা মানে ভোগ করা। কেউ তা করেছিল? তিন কোটি টাকা ব্যাংকে ছিল ৬ কোটি টাকা হয়েছে। ওই টাকা কেউ স্পর্শ করেনি, সেই জন্য এই দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরের জেল দিয়ে দিয়েছে। এই দেশের দুদক আর বিচার বিভাগ মিলে তাকে জেল দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আর সেই চোর প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যার পুরো পরিবার ছিল চোর।
সে সারা দেশে বলে বেড়াতো এতিমের টাকা নাকি খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছেন। এই চোরের মুখের সামনে কেউ কোনো কথা বলতে পারতো না। দুদক ও বিচার বিভাগ তার দাসে পরিণত হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রোগ্রাম করতে যেতাম, তখন কোনো আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে দেখা হলে বলতো-আপা তো কিছু করতে পারেন না ওনার ছোট বোনের জন্য।
বোনের প্রতি কী মায়া! বোনের জন্য কিছু করতে পারেন না।’ আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় আড্ডায় শুনতাম, শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে, রেহানার ক্যাশিয়ার কে, সালমান কার ক্যাশিয়ার, জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়, পলক কার টাকা রাখে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে, আমার সঙ্গে যারা বড় হয়েছেন, ছাত্রজীবন-বিশ্ববিদ্যালয়জীবন, সাংবাদিকতাজীবন ও শিল্প-সাহিত্যের জগতে যাদের দেখেছি, তারা যে বড়লোক হয়েছেন, সেটার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা, দুঃখবোধ বা লজ্জা ছিল না।দুর্নীতি এই সমাজে “এক্সেপ্টেড নর্মে” (সাধারণ বিষয়) পরিণত হয়েছিল। কেউ প্রশ্ন করত না, এত টাকা কোত্থেকে এল? উল্টো গর্ব করত, খুশি হতো; আরে, তার এত টাকা! অবৈধ বিত্ত নিয়ে অহংকার চলত।মসজিদ কমিটিগুলোও চোরে ভরে গিয়েছিল।’ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো ধর্মই দুর্নীতি ও মানুষের হক মেরে খাওয়া অনুমোদন করে না।
একটা ধার্মিক মানুষ অসৎ হয় কীভাবে, কীভাবে অন্যের হক মেরে খায়, আমানতের খেয়ানত করে, নিজের দায়িত্বে অবহেলা করে? আমরা সবাই যদি এমন করে ভাবতে শিখি, আমার মনে হয় কোনো আইন-টাইন দরকার নেই। সভায় বিশেষ অতিথি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা যে ধরনের তথ্য পাচ্ছি, সেটি অত্যন্ত বিব্রতকর।
এত দিন যা শুনে এসেছি, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। অনিয়ম, অনাচার, বৈষম্য, দুর্নীতি, লুণ্ঠনতন্ত্র। বুকে হাত দিয়ে বলছি, আমি বিব্রত হচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে।’ তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করেন তিনি। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।