৭:৩৪ অপরাহ্ণ
জগন্নাথপুরে ধান কাটার ধুম, শ্রমিক সংকট ও শিলা বৃষ্টির শঙ্কায় দিশেহারা কৃষক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ধান কাটার ধুম পড়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর তদারকি চলছে। হাওর পরিদর্শনকালে প্রশাসনের কর্তারা দ্রুত জমির পাকা ধান কর্তন করতে কৃষকদের জোর তাগিদ দিয়েছেন।
কৃষকরাও শ্রমিক ও হারভেস্টার মেশিন দিয়ে জমির পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একই সঙ্গে ধান মাড়াই, ধান বাড়িতে নেয়া, মাঠে শুকানো ও গোলায় তোলা নিয়ে হাওরজুড়ে কৃষক-কৃষাণীরা এবং কৃষক পরিবারের আবাল-বৃদ্ধ বণিতা সবাই মিলে রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক ভাবে কাজ করছেন।
যা উৎসবে পরিণত হয়েছে। জমিতে ভালো ধান হওয়ায় মনের আনন্দে কাজ করছেন কৃষক পরিবারের লোকজন। তবে কাঙ্খিত শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দাবিতে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা।
হাওরের উঁচু জমির ধান হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কাটা গেলেও নিচু জমির পানিতে থাকা ধান নিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর আকাশের চোখ রাঙানী কৃষকদের বুক কেপে উঠে।
এর মধ্যে ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ঘুর্ণিঝড় হয়েছে। এ সময় ভারী বৃষ্টির সাথে অল্প হলেও শিলা ছিল। এতে ধানের ক্ষতি না হলেও আতঙ্কিত ছিলেন কৃষকরা। ১৭ এপ্রিল বুধবারও দিনের বেশির ভাগ সময় আকাশ মেঘলা ছিল।
ফের ঘুর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। জমিতে পাকা ধান শ্রমিক সংকটে কাটা যাচ্ছে না। তার উপর শিলা বৃষ্টির ভয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভূক্তভোগী কৃষকেরা।
আর যারা ধান কাটতে পারছেন, তারা চিন্তামুক্ত হয়ে মনের আনন্দে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। ১৭ এপ্রিল বুধবার উপজেলার নলুয়ার হাওর পাড়ের গ্রাম দাস নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ও কৃষক রণধীর কান্তি দাস রান্টু বলেন, এখন হাওরজুড়ে ধান কাটার ধুম পড়েছে। যে যেভাবে পারছেন ধান কেটে বাড়িতে আনছেন।
তবে হাওরের সব জায়গা সমান নয়। উঁচু জমির ধান মেশিন দিয়ে কাটা গেলেও নিচু জমিতে পানি ও কাঁদা রয়েছে। যে কারণে মেশিন নামতে পারছে না। আর এসব জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় অনেকে ধান কাটতে পারছেন না। তার উপর শিলাবৃষ্টির শঙ্কা তো আছেই।
চিলাউড়া গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম সবুর বলেন, গত ৫ দিন আগে আমার জমির ধান পেঁকে গেছে। তবে আজ পর্যন্ত শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারিনি। বহিরাগত শ্রমিকরা কথা দিয়েও আসেনি। স্থানীয় শ্রমিকরা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত বছর এক কেদার জমির ধান কাটিয়েছি ২ হাজার টাকায়। এবার তারা চাইছে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। তবুও শ্রমিক পাচ্ছি না। শ্রমিকদের বাড়ি যেতে যেতে হয়রান হয়ে গেছি। জমিতে পাকা ধান রেখে রাতে ঘুমও হয় না। কি করবো বুঝতে পারছি না। অবশেষে আগামী বৃহস্পতিবার জমির ধান কাটবে বলে কিছু শ্রমিক কথা দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেশিন দিয়ে কাটা যাচ্ছে না বলেই এমন বিপাকে পড়েছি। নারিকেলতলা গ্রামের কৃষক আছলম উল্লাহ বলেন, কিছু জমির ধান কাটলেও বাকি জমির ধান নিয়ে চিন্তায় আছি। খাশিলা গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জমির ধান কাটতে পারবো। তবে শিলাবৃষ্টির শঙ্কায় বুক কেপে উঠে।
উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদিক আলম বলেন, মূলত ঈদের কারণেই ধান কাটা পিছিয়ে পড়েছে। ঈদের ২/৩ দিন আগ থেকেই ধান পাকতে শুরু করেছে। ঈদের পর শ্রমিক আসতে বিলম্ব হওয়ার এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে-এক সাথে জমির ধান পেঁকে যাওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আসলে শ্রমিক সংকট নয়। এক সাথে ধান কাটা শুরু হওয়ায় সবার শ্রমিক প্রয়োজন, তাই সংকট মনে হচ্ছে। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, এবার ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর বোরো জমি আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ১০ মেট্রিকটন ধান। বর্তমান হাওরে ধান কাটার ধুম পড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথাও শ্রমিক সংকট মনে হচ্ছে না। স্থানীয় ও বহিরাগত ৭৫টি হারভেস্টার মেশিন এবং স্থানীয় ও বহিরাগত ১০ হাজার শ্রমিক হাওরে ধান কাটছেন। আশা করছি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, জমির পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা নিয়মিত তদারকি ও হাওর পরিদর্শন করছি। বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় ৮০ ভাগ ধান পেঁকে গেলেই কর্তনের জন্য কৃষক ভাইদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।