৭:৫৪ অপরাহ্ণ
ছাতকে নিজে বাঁচতে মাদরাসা শিক্ষককে ফাঁসালেন ধর্ষক ধরা পড়ল ডিএনএ পরীক্ষায়
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় দুলাভাইয়ের ধর্ষণে আন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন স্কুলছাত্রী। এ ঘটনায় মেয়ের আত্মীয় মাদরাসা শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছিল ওই ধর্ষকসহ আত্মীয়রা। পরবর্তীতে শিশুর জন্মের পর ডিএনএ পরীক্ষায় প্রকৃত ধর্ষক চিহ্নিত হয়।
এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হয়রানির শিকার মাদরাসা শিক্ষকের বড় ভাই ছাতক উপজেলার খুরমা ইউনিয়নের জাতুয়া গ্রামের মৃত ক্বারী আফতাব উদ্দিনের ছেলে মুহাম্মদ আব্দুস সালাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি তার ভাই মাওলানা সোলেমান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মৃত সাজিদুর রহমানের ছেলে মামুন মিয়া। মামুন তাদের সম্পর্কে তালতো ভাই।
মামলায় ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসা ছোট বোন সিপা বেগমকে (১৩) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ এবং এর ফলে আন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার অভিযোগ তোলা হয়।
এ মামলার পর ২৭ জানুয়ারি সোলেমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সোলেমানকে নিয়ে বেশকিছু সংবাদও প্রচার হয়। মুহাম্মদ আব্দুস সালাম অভিযোগ করেন, আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে সারারাত অমানবিক নির্যাতনের পর আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ।
জেল হাজতে থাকাবস্থায় ভিকটিম সিপা’র ভাই মামুন সোলেমানের সঙ্গে দেখা করে মামলাটি আপোষ হয়েছে বলে জানান এবং কোর্টের আসার পর আপোষনামায় সাক্ষর করতে বলে। পরবর্তীতে আদালতের হাজতখানায় তার কাছ থেকে কয়েকটি কাগজে সাক্ষর নেওয়া হয়।
কিন্তু, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জেলে থাকাবস্থায় বিয়ের আয়োজন করে জামিনের ব্যবস্থা করেন মামলাকারী নিজেই। আব্দুস সালাম তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখানো এবং তদন্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ প্রভাবিত হয়ে মামলাটি তদন্ত করেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'কিন্তু সত্য বেশিদিন গোপন থাকে না। ২০২১ সালের ১০ আগস্ট সিপা বেগমের গর্ভজাত সন্তান ভূমিষ্ট হয়।
বিভিন্ন সময় চাচাতো বোনের স্বামী আনকার মিয়ার (যিনি মামলার অন্যতম সাক্ষী) সঙ্গে সিপা বেগমের ফোনালাপ, ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও চালচলনে আমাদের সন্দেহ আরও ঘণীভূত হয়। তার কথায় শিশুটির পিতৃপরিচয় নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা লক্ষ্য করা যায়।
এমনকি সে স্বীকারও করে শিশুটি সোলেমান সিদ্দিকীর ঔরসজাত নয়।' সোলেমান সিদ্দিকীর ভাই আরও বলেন, 'আমার ভাই বারবার বলছিল সে এ ধরনের খারাপ কাজ কখনও করতে পারে না। তার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা এসব কথা এবং সিপার অসলংগ্ন কথায় আমরা আরও নিশ্চিত হই।
তাই, বিচারকের কাছে ডিএনএ টেস্টের জন্য অনুরোধ করি। আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে একই বছরের ১৪ অক্টোবর মাননীয় বিজ্ঞ আদালত শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিম সিপা বেগম, নবজাতক শিশু, আমার ভাই সোলেমান এবং আমাদের সন্দেহের তালিকায় থাকা মামলার অন্যতম সাক্ষী আনকার মিয়ার ডিএনএ টেস্ট করতে ঢাকার সিআইডিকে নির্দেশ দেন।' ডিএনএ টেস্টে শিশুটির সঙ্গে আনকার মিয়ার পুরোপুরি মিল পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
আব্দুস সালাম বলেন, '২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরি হয়। তাতে বলা হয়- ‘ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, সোলেমান আলী ওরফে সোলেমান সিদ্দিকী, সিপা বেগমের গর্ভজাত নবজাতক পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা নন।
ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, আনকার মিয়া, সিপা বেগমের গর্ভজাত নবজাতক পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা।’ আনকার মিয়া নিজেকে বাঁচাতে মামলার বাদী ভাই মামুন, তাদের চাচী অর্থাৎ, আনকারের শাশুড়ী সুফিয়া বেগমসহ অন্যরা মিলে পরিকল্পিতভাবে সোলেমানের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, তাদের এই চক্রান্ত আমার নিরীহ ভাইয়ের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
অন্যদিকে, ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলার গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জকে দায়িত্ব দেন। পরে, গোয়েন্দা শাখার উপরিদর্শক পংকজ দাশ অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক চার্জশিট প্রদান করেন এবং অভিযোগ থেকে আমার ভাই সোলেমান সিদ্দিকীকে খালাস দিয়ে আনকার আলীকে মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেন।' 'কিন্তু ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর মামলার বাদী, ভিকটিম সিপা বেগমের ভাই মামুন তার দুলাভাইকে বাঁচাতে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিত রাখার জন্য একটি স্টে অর্ডার নিয়ে আসেন।
যে কারণে প্রকৃত দোষী বের হওয়া সত্ত্বেও মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আর আমার ভাই সোলেমান অপরাধের বোঝা নিয়ে এখনও দিনাতিপাত করছে।'- যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমার ভাই সোলেমান অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির লোক। তিনি সিলেটের সুনামধন্য একটি মাদরাসা থেকে ইসলামের দ্বীনি শিক্ষা (দাওরায়ে হাদিস তথা মাস্টার্স ডিগ্রি) অর্জন করেছেন। বর্তমানে হবিগঞ্জের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন।
তাকে যেভাবে অপরাধী সাজানো হয়েছে এবং গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে তাতে আমাদের পরিবারের মানসম্মান একেবারে মাটিতে মিশে গেছে। সোলেমান নিজেও দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না।
বাবা দুশ্চিন্তা করতে করতে অপমান নিয়ে এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। মামলা চালাতে গিয়ে কোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ আমরা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।' মুহাম্মদ আব্দুস সালামা সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রকৃত সত্য গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
একইসঙ্গে সোলেমানের সঙ্গে সিপা বেগমের যে কাবিননামা তৈরি করা হয়েছে সেই নিকাহ রেজিস্ট্রার বাতিলপূর্বক সোলেমান সিদ্দিকীর ওপর থেকে সবধরনের দাবি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। এ বিষয়ে তিনি ঘটনার প্রকৃত দোষী আনকার আলী ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।