৪:৪২ অপরাহ্ণ
আমরা ত্রান চাই না পশুদের খাদ্য চাই
কুলাউড়ায় হাওরে বন্যার কারনে গৃহপালিত পশুর তীব্র গোখাদ্য সংকট
কুলাউড়ায় প্রায় মাস খানেক থেকে বন্যার পানির কারনে হাওর অঞ্চলে গৃহপালিত পশুর তীব্র গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে নিম্নাঞ্চলের মানুষজন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই নিলেও তাদের গৃহপালিত পশু গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে পড়েছে মহাবিপাকে।
আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন বৃত্তশালীদের কাছে তাদের জন্য ত্রান না চেয়ে তাদের গৃহপালিত পশুদের জন্য গোখাদ্য চাচ্ছেন। চারিদিকে তৈই তৈই পানির কারনে কৃষি জমি ও মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় এসব পশুদের প্রধান খাদ্য ঘাস ও খড়ের তীব্র সংকট চরম আকার ধারন করেছে। বন্যা দুর্গত হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দরা তাদের নিজেদের সমস্যা ভুলে এসব পশুদের আহার কিভাবে সংগ্রহ করবেন সেই চিন্তায় দিন পার করছেন।
বন্যা আসার আগে অনেক কৃষক ধানের (নেড়া) খের সংগ্রহ করে রাখায় কিছুদিন পশুদের গোখাদ্য হিসেবে সেগুলো ব্যবহার করলেও বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় গোখাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা।
এছাড়াও পানি বাড়ার সাথে সাথে বন্যা দুর্গত লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাই নিলেও পশুদের থাকার জায়গা নিয়েও পড়েছেন তারা মহা সমস্যায়। কেউ কেউ তাদের গৃহপালিত পশু আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে উঠলেও জায়গা সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের পশুদের বাড়িতে পানির মধ্যে বেঁধে রেখে আসতে হচ্ছে। এতে বিষাক্ত সাপ ও পোকা মাকড়ের হামলার শিকার হচ্ছে পশুগুলো। আবার কেউ কেউ বন্যা-মুক্ত আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে তাদের গৃহপালিত পশু পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আবার যারা তাদের পশুদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন তারা গোখাদ্য হিসাবে হাওরের তল দেশ থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেই কচুরিপানাগুলো মহিষ গ্রহণ করলেও গরু, ছাগল ও ভেড়া সেগুলো তাদের আহার হিসাবে গ্রহণ করছে না। এতে অনেক পশু খাদ্য সংকটে ভোগে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বন্যা আক্রান্ত হাওর অঞ্চলের ভূকশিমইল স্কুল এন্ড কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আব্দুর রহিম জানান, তার ১৩টি গরু নিয়ে পরিবারসহ ওই কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা আসার পর থেকে প্রায় ২০-২৫দিন যাবৎ তার গৃহপালিত পশুগুলোর গোখাদ্য নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন। তিনি বলেন আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই নেওয়ার পর সরকারী-বেসরকারীভাবে অনেকেই ত্রান সামগ্রী দিচ্ছেন। যা আমরা খেয়ে পরে বেঁচে আছি।
কিন্তু পশুগুলোর কি হবে তাদেরও তো পেট আছে। অনেক কষ্টে আগের কিছু খের ও খড় ভাগ করে পশুদের খাবার হিসেবে দিয়েছি। কিন্তু সেগুলো মাত্র ৫-৬দিন দিতে পেরেছি। বর্তমানে হাওরের পানির নিচ থেকে কচুরিপানা তুলে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও গরু, ছাগল সেগুলো খেতে চায় না। আমরা ত্রান চাই না পশুদের খাদ্য চাই।
হাওর অঞ্চলের গৃহপালিত পশুর মালিক তছিম মিয়া, এলাইছ মিয়া, কুরবার উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম ও মোবারক আলী বলেন, বন্যা আসার পর থেকে সাধারণ মানুষের কষ্টের চেয়ে গৃহপালিত পশুদের নিয়ে শতশত কৃষক পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ত্রান তো সবাই দিচ্ছে আল্লাহর ওয়াস্তে সবাই এসব নিরীহ পশুদের খাদ্য নিয়ে এগিয়ে আসুন।
ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, আমার ইউনিয়ন হাকালুকি হাওরের মধ্যে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত পরিবার রয়েছে সেখানে। মানুষের পাশাপাশি অনেক গৃহপালিত পশু আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাই নিয়েছে। কিন্তু বন্যা শুরু হওয়ার প্রায় ২০-২৫দিন পর পশুর গোখাদ্য হিসাবে মাত্র ৬০টি প্যাকেট পেয়েছি। যা পশুর তুলনায় অনেক কম।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া প্রাণিসম্পদ অদিদপ্তর (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা নিবাস চন্দ্র পাল জানান, দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাধ্যমে আমরা একটি বাজেট করেছি। কুলাউড়ায় বন্যা আক্রান্ত ১৫০ জন গৃহপালিত পশু পালন পরিবারকে ১০ কেজি করে দানারদার খাদ্য দেওয়া হবে।