৯:৩১ অপরাহ্ণ
গোলাপগঞ্জে স্ত্রীকে মারপিট ও যৌতুক দাবির মামলায় বাবা-মা-ছেলের দন্ড ও জরিমানা
সিলেটের গোলাপগঞ্জে স্ত্রীকে মারপিট ও যৌতুক দাবির মামলায় বাবা-মা-ছেলের দন্ড ও আর্থিক জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৩ নভেম্বর) নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক মো. মুহিতুল হক এনামুল চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন।
ঘোষিত রায়ে দন্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শেখপুর গ্রামের জিয়া উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল হক(৩০),মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে ও আব্দুল হকের বাবা মো. জিয়া উদ্দিন(৫৮) এবং জিয়া উদ্দিনের স্ত্রী আছারুন নেছা(৫০)।
রায় ঘোষণাকালে জিয়া উদ্দিন ও আছারুন নেছা আদালতে উপস্থিত থাকায় তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। অপর আসামি আব্দুল হক পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করে গ্রেফতারের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন আদালতের বিচারক।
আদালতের ঘোষিত রায়ে আসামী মোঃ আব্দুল হক এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১(খ)/৩০ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ (দশ) বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ০৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
অপর আসামী জিয়া উদ্দিন ও আছারুন নেছা-কে উক্ত ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ০৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ০৩ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৫ লক্ষ টাকা দেন মোহরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর দখারপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মাহমদ আলীর মেয়ে হাসিনা বেগম সুমি (২৪) এর বিবাহ।
বিবাহের পর হাসিনা বেগম সুমি জানতে পারেন তার স্বামী আব্দুল হক আওয়ামী লীগ ও সরকার বিরোধী রাজনীতি করেন। সুমি তার স্বামীকে অনেক বুঝিয়ে বলেন যে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি না করে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে।
কিন্তু আব্দুল হক তার স্ত্রীর কথা না শুনে উল্টো দেশনেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটুক্তি এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সুমি এসবের প্রতিবাদ করলে আব্দুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারপিট করেন। এতো কিছুর পরও সুমি তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঘর-সংসার করতে থাকেন। কিন্তু ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতির সাথে যুক্ত আব্দুল হক নিয়মিত সুমিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
এক পর্যায়ে আব্দুল হক তার বাবা-মায়ের কুপরামর্শে সুমির ভাইদের নিকট হইতে যৌতুক হিসেবে টাকা প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এক সময় আব্দুল হক বিদেশ যাওয়ার জন্য সুমির কাছে দশ লক্ষ টাকা দাবী করে। সুমি উক্ত টাকা তার পিত্রালয় থেকে এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে বেদড়ক মারপিট করা হয়।
এসব বিষয় সুমি তার শ্বশুর-শাশুড়িকে বলতে গেলে তারা উল্টো সুমির পিত্রালয় থেকে যৌতুকের টাকা আনার জন্য শারীরিকভাবে ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে এবং বলে যৌতুকের টাকা দিতে না পরলে আব্দুল হককে অন্যত্র বিবাহ দিবে। ঘটনার তারিখ ও সময়ে অর্থাৎ বিগত ১২/০৮/২০১২ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় আব্দুল হক তার স্ত্রীকে বলেন বিদেশ যাওয়ার জন্য দশ লক্ষ টাকা এনে দিতে হবে।
দাবিকৃত টাকা এনে না দিলে তালাক প্রদান করে অধিক টাকা যৌতুক নিয়ে অন্যত্র বিবাহ করিবে। তখন সুমি প্রতিবাদ করলে আব্দুল হক উত্তেজিত হয়ে লম্বা দা দিয়ে সুমিকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে স্বজোরে কুপ মারে সুমি হাত দ্বারা প্রতিহত করতে চেষ্টা করলে হাতে ও মাথায় মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। সুমি মাটিতে পড়ে গেলে আব্দুল হকের বাবা-মা বাঁশের লাটি হাতে নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে শরীরে নিলাফুলা জখম করে।
পরবর্তীতে সুমির ভাই খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় হাসিনা বেগম সুমি বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় আব্দুল হক ও তার বাবা-মায়ের নাম উল্লেখ করে (থানার মামলা নং ১৩ তাং ১২/০৮/২০১২ইং) দাখিল করেন । মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জসিম উদ্দিন মামলার তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি অভিযোগপত্র নং৫৫ দাখিল করেন।
আদালতে দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষিদের জবানবন্দি এবং সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে রোববার (২৩ নভেম্বর) আসামীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত রায় প্রদান করেন। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী আব্দুর রহমান ও রেজাউল করিম চৌধুরী এবং রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আব্দুল মালেক।