সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০ ২৪
এস ডি সুব্রত
৮ মার্চ ২০ ২২
৪:১৭ অপরাহ্ণ

কর্মক্ষেত্রে নারী: এস ডি সুব্রত
"এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল,
ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-গন্ধ সুনির্মল।"
--(নারী - কাজী নজরুল ইসলাম )

আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে  নারী নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন । প্রায়শই নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না । হয়রানি এমনকি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা তাদের কর্মস্থলে । নারী শ্রমিকরা নানা বঞ্চনা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। পাচ্ছে না  তাদের ন্যায্য অধিকার । কর্ম ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের স্বার্থ   রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রণয়ন করেন। শ্রম আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি আইন হচ্ছে ‘নারী শ্রমিকদের ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করাতে হবে মালিক পক্ষ থেকে। কিন্তু বেশির ভাগ কলকার খানাগুলোতে এই আইনের প্রয়োগ নেই। নানা সমস্যা মেনে নিয়েই নারী শ্রমিকরা কাজ করে আসছেন।  নারীরা সব জায়গায় হয়রানি হচ্ছে।

নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন শামীরা আকতার জলি।  তিনি  এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নারীরা সব সময় অবহেলিত। নারী শ্রমিকরা কলকারখানায় কাজ করছে, অফিস আদালতে কাজ করছে। আমাদের শ্রমবান্ধব সরকার নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সব কাজেই নারী এগিয়ে চলছে। কিন্তু তাদের এই কর্মক্ষেত্রে এসব নারীরা এমন কিছু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে যা তারা বাইরে কাউকে বলতে পারছে না এবং নিজের থেকেও সমাধান করতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, কোন কলকারখানায় নারী এবং পুরুষ শ্রমিকদের সমমজুরি দেয়া হয় না। নারীরা আট ঘন্টার জায়গায় বারো ঘন্টা শ্রম দিচ্ছে। তারপরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তারা অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এসব বিষয় নিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলতে গেলে শ্রমিকরা ভয় পায়। তাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।তিনি বলেন  সবচেয়ে বড় কথা এই অধিকার আইন বাস্তবায়ন করতে হলে নারীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ করতে হবে। যে যেখানে নির্যাতিত হচ্ছে সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায় ও সম্মান রক্ষায় নারীদেরকেই  এগিয়ে আসতে হবে। নারীর প্রতি সম্মান   নিয়ে  কাগজে কলমে অনেক কথা বলা  হলেও সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷ আর অসম্মানের বিষয়টি সবখানে৷ নারী চলাফেরা করতে গিয়ে, কর্মক্ষেত্রে অসম্মানের শিকার হচ্ছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. সানজিদা আখতার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে নারীর প্রতি সম্মান  দেখানোর মানসিকতার যে একদম উন্নতি হচ্ছে না তা নয়৷ তবে তা এখনো বলার মতো পর্যায়ে  আসেনি।   আলাপচারিতা থেকে শুরু করে পাবলিক প্লেস সবখানেই নারীকে অসম্মান করার প্রবণতা স্পষ্ট৷ এমনকি ভাষার ব্যবহারেও জেন্ডার বৈষম্য আছে, যদিও সেখানে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’ যেমন: পতিব্রতা শব্দটাকে অনেক ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু স্ত্রৈণ শব্দটিকে নেতিবাচবভাবে দেখা হয়৷ স্বামীভক্ত হলে  ভালো, কিন্তু স্ত্রীভক্ত হলে খারাপ৷ নারীর চরিত্র নিয়ে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ আছে, কিন্তু পুরুষদের জন্য নেই৷ প্রবাদ প্রবচনেও আছে নারীকে হেয় করার প্রবণতা৷ যেমন, ভাগ্যবানের বউ মরে অভাগার গরু৷

নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন সন্ত্রাস, ইভটিজিং তো বাংলাদেশের একটি সাধারণ চিত্র৷ বিশ্লেষকরা এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষা, মূলবোধ ও সচেতনার অভাবকে দায়ী করলেও সমাজবিজ্ঞানী, অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘‘শিক্ষিতরাও নারীকে হেয় করেন৷ তারাও নারীকে অসম্মান করেন৷ অনেক উচ্চ শিক্ষিত আছেন, যারা তার স্ত্রীকে ঘরের কাজের লোক মনে করেন, নির্যাতন করেন৷ এর কারণ দীর্ঘকাল নারীর প্রতি সম্মানের চর্চা না থাকা৷ এটা মুখে বলার বিষয় নয়৷ আমাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক  ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ই নারীর প্রতি অসম্মানের উপাদান আছে বছরের পর বছর ধরে৷” নারী আমাদের বোন, নারী আমাদের মা । নারী আমাদের সহযোদ্ধা। নারীর সম্মান রক্ষায় আমাদেরও দাঁড়াতে হবে নারীর পাশে। নারী স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং নারী জাগরণের সংগ্রামে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে পুরুষদের। নারীরা কেউ আমার বোন,কেউ আমার মা, কেউ আমার স্ত্রী।


লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ।
ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ