৮:৪৭ অপরাহ্ণ
# যখত তখন বাড়ি ছাড়ার নোটিশ, প্রতিবছর বাড়া বৃদ্ধি, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা , ভোগান্তির শিকার ভাড়াটিয়ারা#
সিলেটে বাসা ভাড়ায় নেই নিয়ন্ত্রণ
ভাড়াটিয়া! বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবেন? সিলেটে এমনটা চিন্তা করাই এখন কঠিন। প্রতিবছর হু হু করে বাড়ছে বাসা ভাড়া। বাসার মালিকরা নিয়ম কানুন কিংবা আইণের তোয়াক্কা না করেই বাসা ভাড়ার মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসন কিংবা সংষিøষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যেন একেবারেই উদাসীন। সিলেটকে দ্বিতীয় লন্ডন বলা হয়।
অথচ মধ্যবিত্তদের অনেকেই এখানে এখনো দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকেই জীবিকার সন্ধানে কিংবা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় সন্তানদের পড়াখেলা করানোর জন্য গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসেন। নিজ বাড়ি ঘর-পরিবার পরিজন ছেড়ে বসবাস করতে আসেন শহরে। কিন্তু বাসা ভাড়া পাওয়া প্রায় সময়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়াও নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় ভাড়াটিয়াদের। বাসা ভাড়া মিললে ও মালিক পক্ষের নিয়ম কানুনের কারনে ভাড়াটিয়াদের নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালা কর্তৃক নানা ধরনের অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হন। যখন তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা, বছর যেতেই না যেতেই ভাসা ভাড়া ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হন ভাড়াটিয়ারা। বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উর্ধ্বমূখি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ঔষুধ সহ বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের দাম প্রতিবছর বাড়ছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিলেটের বাসা বাড়া। মধ্যবিত্ত ছোট-বড় পরিবার মানুষ জন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা দূরহ হয়ে পড়ছে। আয়ের চেয়ে ব্যায় দ্বিগুন হয়ে দাড়িয়েছে। সিলেট নগরীর প্রতিটি পাড়ায় কম পক্ষে ছোট পরিবার যদি বাসা ভাড়া নিতে চায় তাহলে ৮-১০হাজার, পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি বেশি হয় তাহলে কোন কথা নাই ১০-১৫ হাজারে মধ্যে বাসা ভাড়া খুজতে হবে। তার মধ্যে নানা জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়।
বাসা মালিকদের অনেক আছেন যারা নিজেদেরকে রাজপুত্র-রাজরাণী, জমিদার ভাবেন, জমিদারী স্টাইলে ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলেন। কথাবার্তার মধ্যে উগ্রতা, দাম্ভিকতা দেখা যায়। সর্বপূরি সমস্যার অন্ত নেই ভাড়াটিয়াদের। দেশের শতকরা কত শতাংশ মানুষ ভাড়াটিয়া হিসাবে থাকনে তার কোন সঠিক তথ্য নেই। রাজধানীতে প্রায় -৭০-৮০শতাংশ মানুষ ভাসা ভাড়ায় থাকে। সিলেটে কত শতাংশ মানুষ ভাসা ভাড়ায় থাকে তার কোন নির্দিষ্ট হিসাব না থাকলে ও বিভিন্ন সূত্রে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ মানুষ বাসা ভাড়ায় থাকেন। সিলেট নগরীর মজুমদারী কমলা বাগানের এক ভাড়া বাসায় থাকতেন হাসিনা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন,“ নগরীর কমলা বাগান এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। বাসার মূল মালিক লন্ডন থাকেন। সেই বাসার দায়িত্বে রয়েছেন এক আত্মীয়। তিনি একজন এডভোকেট। এই ব্যাক্তি বাসা ভাড়া দেয়ার সময় একটি চুক্তিনামায় স্বাক্ষর রাখেন। সেখানে তিনি লিখেছেন প্রতিবছর পূর্ণ হওয়ার এক মাস আগে বাসা ছাড়তে হবে। তিনি প্রতি বছর ভাড়াটিয়াদের নানা অজুহাতে বের করে দেন। লন্ডন প্রবাসিদের দোহাই দিয়ে ভাড়াটিয়াদের বের করে দেন।
তিনি বলেন, বাসার মালিক দেশে আসতে চান তার পরিবার নিয়ে এবং তিনি এই বাসায় থাকবেন। পরে দেখা যায় আমি বাসা ছাড়ার পর আরেক ভাড়াটিয়াকে এই বাসার ৩য় তলা ভাড়া দেয়া হয়। পরে শুনি তাদেরকেও এক বছরের মধ্যে বাসা ছাড়তে হয় বাসার মালিক দেশে আসছেন বলে। তাদেরকেও বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এরকম হয়রানির শিকার আমার মত শতশত ভাড়াটিয়ারা”। তিনি বলেন-বিশেষ করে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে আসবাপত্র নিয়ে যাওয়া। সন্তানদের পড়া খেলার ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি হয়। স্কুল পরিবর্তন করতে হয়। যার ফলে মানসিকভাবে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন -১৯৯১ অনুযায়ী ধারা ১০,২৩,২৪, ২৫,২৬ বাড়ি ভাড়ার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এই আইন অনেক ভাড়াটিয়ারা জানেন না এবং অধিকাংশ বাসার মালিকও জানেন না এবং মানেন না। যেমন: মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ, এক মাসের অধিক অগ্রীম ভাড়া নেওয়া যাবে না, দুই বছরের আগে বাসা বাড়া বাড়ানো যাবে না, দুই বছর পর বাড়াটিয়াদের সম্মতির ভিত্তিতে বাসা বাড়ানো যেতে পারে, ভাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের আসবাপত্র ক্রয় বা আটক করতে পারবেন না। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৯৭২ সালে চুক্তি আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করলে ভাড়াটিয়াকে যখন তখন উচ্ছেদ করা যাবে না। ভাড়া দেয়ার পূর্বে ভাড়াটিয়াদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে দেয়া, মেরামত, পানি সরবরাহ করা সহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাসার মালিক তা মানেন না এবং দায়িত্ব পালন করেন না।
বিশেজ্ঞদেরমতে- বাড়ির নিজস্ব রিজার্ভ ট্যাংকেই রয়েছে জীবাণু এবং ট্যাংকগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে সেখান থেকেই জন্ডিসের জীবাণুসহ পানি বাহিত রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়তে পারে। নিয়ম অনুযায়ী বছরের প্রতি চারমাস পরপর পানির টেংক, আন্ডারগ্রাউন্ডের পানির রিজার্ভার জীবাণুমুক্ত করে যে পানি পাবেন তা জীবাণুমুক্ত থাকবে। সিলেট নগরীর বেশিরভাগ বাসার মালিক বছরের পর বছর চলে যায় পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেন না। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রতি চার মাস অন্তর অন্তুর পানির ট্যাংক পরিস্কার করার কথা। আইন অনুযায়ী বাসা-বাড়ির মালিকের দায়িত্ব সংষ্কার কাজ, মটর মেরামত, ইলেকট্রিসিটি লাইন মেরামত, পানির ট্যাবসহ সব কিছু মেরামত করে দেয়া। কিন্তু দেখা যায় এর কিছুই করেন না।
শুধ তাই নয় বাসার সামনে খোলা জায়গা বা উঠানেও খেলতে দেন না ভাড়াটিয়াদের শিশুদের। তাদের চিকিৎকারে নাকি তাদের সমস্যা হয়। ভাড়াটিয়াদের কষ্ট, হয়রানি, অভিযোগের শেষ নেই। ভাড়াটিয়াদের দেখার কেই নেই। যখত তখন বাসা ছাড়ার নোটিশ দেন, ইচ্ছমত বাড়া বৃদ্ধি করেন। তবে আইনি জটিলাতার কারণে কোন ভাড়াটিয়ারা আদালের শরাপন্ন হন না। সিলেট সিটি কর্পোশেনের হোল্ডিংয়ের হিসাবমতে, নগরীতে প্রায় ৮০হাজার বাসা-বাড়ি রয়েছে। নিবন্ধনের বাইরে প্রায় ২০হাজার বাসা রয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন- বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রন ১৯৯১ সালের আইনের সংশোধন করা করা প্রয়োজন, বর্তমান সমপযোগী আইন ও বাস্তবায়ন করা জরুরিভাবে প্রয়োজন এবং একটি আইনি সেল গঠন করা প্রয়োজন।
আইনটি বাস্তবায়ন করে সরকার ভাড়ি ভাড়া নিধারণ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, সিলেটে বাড়ি ভাড়া নির্ধারনের ক্ষেত্রে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। হোল্ডিং টেক্স করা দিচ্ছেন, ঠিকমত দিচ্ছেন কিনা, ফাকি দিচ্ছেন নি সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন তদারকি করতে হবে। তিনি বলেন, অনেকেই এখন বাসা ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তারা কি ঠিকমত টেক্স দিচ্ছেন। আইন অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, ভাড়ির মালিকদের আইন মেনে চলা, যখন তখন বাড়া বৃদ্ধি না করা, বাড়িটায়াদের বের করে না দিয়ে মানবিক হওয়ার আহবান জানান।