৬:৫২ অপরাহ্ণ
শান্তিগঞ্জে পুলিশের অভিযানে শিশু বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪ : বিক্রিত শিশু উদ্ধার
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নারী-পুরুষ সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
প্রায় মাস এক মাস আগে দেড় বছর বয়সী শিশুপুত্র মকবুল হাসানকে তার পিতা এক লক্ষ টাকায় বিক্রির অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত রবিবার(১৭ সেপ্টেম্বর) শান্তিগঞ্জ থানায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগম অভিযোগের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধর’র দিক নির্দেশনায় ও শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সার্বিক সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক মোহন রায়ের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সের সহায়তায় সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করেন এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়া আসেন।
গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা হলো ভিকটিমের পিতা সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানা এলাকার মল্লিকপুর গ্রামের সাবা উদ্দিনের ছেলে সালে নুর(৩০), একই জেলার শান্তিগঞ্জ থানা এলাকার বাবনিয়া গ্রামের মৃত আশক আলীর ছেলে মনফর আলী(৪৫), জগন্নাথপুর থানা এলাকার কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত দারিছ মিয়ার ছেলে রমাই মিয়া(৫৫) ও নরসিংদী থানা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ সদর থানা এলাকার ভাড়াটিয়া খেজাউরা হাছন নগর এলাকার মৃত রফিক আলমের মেয়ে লাকি আক্তার(৩৮)।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাফিয়া বেগম ও তার স্বামী অভিযুক্ত সালে নুরদ্বয়ের মধ্যে পারিবারিক ও দাম্পত্য নিয়া মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় এবং মাফিয়া বেগমকে তাহার দুই শিশুপত্র সহ পিত্রালয় শান্তিগঞ্জ থানা এলাকার বাবনিয়া গ্রামে পাঠিয়ে দেয়।
গত এক মাস পূর্বে অভিযুক্ত সালে নুর তাহার শশুড়ালয় বাবনিয়া গ্রামে আসে এবং স্ত্রী ও পুত্রদেরকে নিয়ে যেতে যায়। মাফিয়া বেগম তাহার স্বামীর সাথে মনোমালিন্যতা থাকার কারণে পিত্রালয়ে অবস্থান করেন।
এতে অভিযুক্ত সালে নুর তাহার বৃদ্ধ মা অসুস্থতার কথা বলিয়া তাহার দুই ছেলেকে সাথে নিয়া যায়। কিছুদিন পর সালে নুর তাহার বাবনিয়া সাকিনে তাহার শশুড়ালয়ে ফিরিয়া আসে। তখন স্বামী অভিযুক্ত সালে নুর এর সাথে মাফিয়া বেগমের সম্পর্ক ঠিক হইলে মাফিয়া বেগম তার দুই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেন।
তখন সালে নূর মিয়া জানায় যে, তার দুই ছেলে তাহার গ্রামের বাড়িতে আছে। মাফিয়া বেগম তার ছেলেদের দেখার জন্য সেখানে থেকে নিয়া আসার জন্য বলেন। তখন সালে নূর মিয়া জানান যে, তাহার ছেলেরা তার দাদীর সাথে ঢাকা শহরে আছে।
মাফিয়া বেগম তার শাশুড়ির সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে, তার বড় ছেলে রাব্বি হাসান উনার কাছে আছে। তখন মাফিয়া বেগম সালে নূর মিয়াকে তার ছোট ছেলে মাকবুল হাসান এর কথা জিজ্ঞেস করিলে সে তাল বাহানা উত্তর দেয়। তার কথাবার্তায় মাফিয়া বেগমের সন্দেহ হইলে তিনি তাহার আত্মীয় স্বজনকে সাথে নিয়া তাকে বার বার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেন। একপর্যায়ে ভিকটিমের পিতা সালে নুর মিয়া জানায়, অভিযুক্ত মনফর আলী ও রমাই মিয়ার সহায়তায় অপর অভিযুক্ত লাকী আক্তারের নিকট এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাহার শিশুপুত্র ভিকটিম মকবুল হাসানকে বিক্রয় করে বলে স্বীকার করে।
উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধর’র দিক নির্দেশনায় ও শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক মোহন রায়ের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করেন এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়া আসেন।
শান্তিগঞ্জ থানা ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী জানান, শিশু বিক্রির অভিযোগের ঘটনায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৪জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।