১০ :০ ৫ অপরাহ্ণ
এগারো জনের ১৭ ঘন্টার আনন্দময় ট্যুর
১৬ জুন ২০২৩ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টায় শেষ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিয় সহকর্মী জুয়েল কুমার সাহার বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় নরসিংদী শহরে যোগদান উপলক্ষে আমাদের আনন্দময় সফর। সকাল ৭টা নরসিংদীতে যাবার জন্য নগরীর নানা প্রান্তে ১১জন প্রস্তুত।
এজন্য সবাইকে ভোর থেকেই কাজ করতে হয়েছে। ড্রাইভার জসিম গাড়ি নিয়ে ৭টায় হাজির বিনয় ভূষণ রায়ের দেবপুরের বাসায়। অতিরিক্ত পরিচালক সুভাষ চন্দ্র আচার্য্য ও অফিসার চয়ন কান্তি রায় গাড়িতে ওঠবে দেবপুর থেকে। যাত্রায় বিলম্ব ঘটে বিনয় ভূষণ রায়ের প্রস্তুতি নিতে। নানা প্রান্তে থাকা অন্য ৮ জনের ফোন বাজতে থাকে।
মোঃ আব্দুল কাইয়ুম সিলেটের সুসন্তান বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পিকারের নামে স্থাপিত "হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী চত্বর" থেকে, পরেশ চন্দ্র দেবনাথ ও সিন্ধু ভূষণ পাল রোজভিউ পয়েন্ট থেকে, ডিজিএম (ক্যাশ) মোঃ আব্দুর রশিদ, যুগ্ম ব্যবস্থাপক ছালেহ আহমদ ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রান্টু চন্দ্র দাস শাহজালাল উপশহর বাংলাদেশ ব্যাংক নিবাসে, সতীশ চন্দ্র দাস চন্ডিপুলে প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রি জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ চত্বরে গাড়ির জন্য ছিলেন অপেক্ষায়।
এরমধ্যে আচমকা অতি বৃষ্টির আশঙ্কা নির্বিঘ্নে যাত্রা শুরুর অন্তরায় হয় কি না সে দুর্ভাবনাও ছিল। আমি বিনয় বাবুর সাথে কথা বলে সাড়ে ৭টায় পদব্রজে শিবগঞ্জের দিকে রওনা দিলাম। শিবগঞ্জ পয়েন্ট পেরিয়ে উপশহরের কাছাকাছি পৌঁছালে বিনয় ভূষণ রায় গাড়িসমেত হাজির হলেন। দ্রুত নিবাসে গিয়ে অপেক্ষমান ৩জনকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ৪ জনকে ওঠিয়ে নরসিংদীর পথে ৮ টার দিকে শুভযাত্রা হলো।
গাড়ি ছাড়তে বিলম্ব করায় বিনয় ভূষণ রায় স্বেচ্ছায় সকলকে গোয়ালাবাজারে সকালের নাস্তা করালেন। সিলেট বিভাগের শেষ প্রান্ত মাধবপুরে তাঁর বেয়াইয়ের নামকরা মিষ্টির দোকানে নিয়ে গিয়ে মজাদার মিষ্টি সন্দেশ জিলাপি খাওয়ালেন। যাত্রাবিরতি শেষে প্রিয় মাধবপুর ছেড়ে গাড়ি ছুটলো নরসিংদীর পথে।
বি,বাড়িয়ার শেষ ও নরসিংদীর শুরুর দিকের একটি গ্রামীণ এলাকার মসজিদে দুপুর সোয়া একটায় জুমার নামাজের জন্য আবার আধা ঘন্টার জন্য গাড়ি থামলো। জুমার ফরজ দুই রাকাত পড়েই আমরা দ্রুত বের হবার সময় একটি মিষ্টি শিরনী হিসেবে পেলাম। খেয়ে ভালোই লাগলো। পৌনে দুইটায় আবার যাত্রা হলো শুরু। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি মতে আমরা নরসিংদী শহরে জুয়েল কুমার সাহার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ফ্রেশ হয়ে রাজরাণী কমিউনিটি সেন্টারে যাবো।
পথে বিলম্ব করায় জানিয়ে দিলাম আমরা সরাসরি সেন্টারে আসছি। নরসিংদী শহরে পৌঁছে পথভুলে সার্কিট হাউস রোডে ঢুকে পড়ে হেমেন্দ্র মোড়ের রাঙ্গামাটি এলাকার রাজমনি কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছাতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। স্থানীয় মানুষের দেখানো পথে আমরা নরসিংদী শহরের ভিতরের নানা সড়ক ঘুরে রাজরাণী কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছি।
ভোরে সিলেট থেকে সড়কপথে গিয়ে জুয়েল কুমার সাহার বাড়িতে পৌঁছেছেন তাঁর পাঁচ ব্যাচমেট দেলওয়ার হোসাইন, মোঃ আব্দুহ সামাদ, মোঃ জুবায়রুল হাসান, জয়দ্বীপ চক্রবর্তী, জাহেদুর রহমান দিপু। সাথে ছিলেন সিলেট অফিসের সহকর্মী মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ও মোঃ মনিরুল ইসলাম। ঢাকা থেকে আসেন সৈকত সাহা ও জূবেল আল মনসুর।
সৈকত ও জুবেল অনেক দিন সিলেট অফিসে ছিলেন। অনেক দিন পর তাদের সাথে দেখা হয়ে বেশ ভালো লাগলো। বিয়ের সেন্টারে যত্নআত্তির সাথে হেভি খাবার আর ফটোসেশনের পর বিকাল ৪টায় বিদায় নিয়ে নরসিংদী শহরের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান দেখতে বের হলাম। প্রথমে গেলাম পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ব্রিজ এলাকায়। সেখানে ভাসমান কয়েকটি পার্ক ও হরেক পন্যের পসরা নিয়ে অনেক দোকান রয়েছে।
সরকারি বন্ধের দিনে মেঘনার শাখা নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ পেরিয়ে নান্দনিক পরিবেশ ঘুরে দেখতে লোকজনের ভিড় ছিল। আমরা কিছু সময় অবস্থানের পর চলে যাই ঢাকা - সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা এলাকায় ড্রিম হলিডে পার্কে। বিকাল ৫টায় পার্কের সামনে পৌঁছলে ভিতরে ঢুকবো কিনা আমরা চিন্তা করি। আমাদের তাড়া ছিল সিলেট ফেরার। মনে শংকা সিলেটের বৈরী আবহাওয়া। সফরসঙ্গী ছালেহ আহমদ ও চয়ন কান্তি রায় ভিতরে ঢুকার জন্য অনড় ছিলেন।
শেষতক এক ঘণ্টা অবস্থানের শর্তে সবাই আমরা পার্কের ভিতরে ঢুকতে সম্মত হই। টিকেট কাটতে যান রান্টু চন্দ্র দাস। প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ৩২০/- টাকা। ভিতরে ঢুকে আমরা পার্কের বিশালতা ও নানান স্থাপনা দেখেই অভিভূত হই। পার্কের নামাজের স্থানে আসরের নামাজ আদায় করি। ঘন্টা পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা সামনের দিকে দ্রুত চলতে থাকলেও ফেরার যেন কোন তাড়া নেই। আমরা তখনও দেখে চলেছি ওয়াটার পার্ক, ভুতের বাড়ি, আদর্শ গ্রাম, সাফারি পার্ক, পদ্মা সেতু, সুরঙ্গ পথ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, টাইটানিক জাহাজ আর হরেক রকমের রাইড চলাচলের দৃশ্য। পার্কটি ঘুরে দেখতে পুরো দিনের দরকার।
আমরা স্বল্প সময়ে কিছুটা ধারণা নিয়ে দলের সমন্বয়কারী বিনয় ভূষণ রায়ের ফোনে বিশাল পার্কের নানা রাস্তা ঘুরে এক্সিট গেট দিয়ে বের হয়ে পার্কিং এ রাখা গাড়ির কাছে পৌঁছালাম। বিকাল সাড়ে ৬টায় আমরা সিলেটের পথে ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের যাত্রাপথে স্বস্তির কারণ ছিল উন্নতমানের হাইয়েস গাড়ি ও দক্ষ চালক থাকায়। মি: জসিম +8801718978944 একজন অতীব ভদ্রলোক। তাঁকে নিয়ে এটা ছিল আমাদের প্রথম ট্যুর। কথামতো সকাল ৭টায় যথাস্থানে উপস্থিতি, পূর্বের কথার বাহিরেও স্পট ঘুরতে তিনি না করেননি। গাড়িচালনা ছিল ভাল, ধীরস্থির। কখনো ফিরার জন্য কোন তাগাদা দেননি। নিশ্চুপ বসে ছিলেন গাড়িতে। সিলেটের স্পটগুলো, সিলেট থেকে ঢাকা বা দূরযাত্রায় নিরাপদ ভ্রমণে তাঁকে বেছে নিতে পারেন। রাত পৌনে আটটার সময় ভৈরবে অত্যাধুনিক জান্নাত রিসোর্টে সন্ধ্যার নাস্তা করি। সোয়া আটটায় আবার গাড়ি চলতে শুরু করে সিলেটের পথে। রাত সোয়া ১০টার কিছু পরে শায়েস্তাগঞ্জে সিন্ধু ভূষণ পাল নামেন। তিনি যাবেন শ্রীমঙ্গল।
রাত সাড়ে ১১টায় সিলেটের চন্ডিপুলে আব্দুস সামাদ আজাদ চত্বরে নামেন পরেশ চন্দ্র দেবনাথ ও সতীশ চন্দ্র দাস। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী চত্বরে নামেন মোঃ আব্দুল কাইয়ুম। শাহজালাল উপশহর বাংলাদেশ ব্যাংক নিবাসে গিয়ে নামেন মোঃ আব্দুর রশিদ, ছালেহ আহমদ ও রান্টু চন্দ্র দাস।
শিবগঞ্জ পয়েন্টে নেমে কিছুটা পথ হেঁটে খারপাড়ার বাসায় আমি চলে যাই। সবশেষে রাত ১২ টায় দেবপুর গিয়ে নামেন সুভাষ চন্দ্র আচার্য্য, বিনয় ভূষণ রায় ও চয়ন কান্তি রায়। শেষ হয় ১৫ ঘন্টার আনন্দময় ট্যুর। সিলেট - নরসিংদী - সিলেট ১০ সীটের হাইয়েসে ভ্রমণের জন্য ভাড়া দিতে হয় ১০হাজার টাকা।