বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০ ২৪
স্টাফ রিপোর্ট::
৫ ডিসেম্বর ২০ ২৩
৪:৫৩ অপরাহ্ণ

শাল্লায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের জমি দখলের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতা, স্কুলের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ ও উন্নয়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলের সাবেক শিক্ষকরা।

তারা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলের কাছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা, স্কুল থেকে বদলি এবং স্কুলের জমি উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিন্তাহরণ চৌধুরী বলেন, দুই বছর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কাজল কান্তি চৌধুরীর মৃত্যুর পর সহকারী শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান।

অথচ তিনি বিভাগীয় মামলায় শাস্তিস্বরূপ তিরস্কারপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাপস কুমার রায়কে অবহিত করা হলেও তিনি রহস্যজনক কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেন।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি স্কুলের জমিতে গৃহ নির্মাণ, স্কুল আঙিনায় পারিবারিক সবজি বাগান স্থাপন, ম্যানেজিং কমিটিতে নিজের স্ত্রীকে অন্তর্ভূক্তি, উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিদ্যালয়ে উন্নয়ন খাতে দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৩০ হাজার টাকা রঙের কাজে ব্যয় করা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।বাকি টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার (তাপস কুমার রায়) ও প্রধান শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদার মিলে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। স্কুলের জমি দখল করে শৈলেন চন্দ্র নিজের ঘর নির্মাণ করার অভিযোগ তুলে তারা বলেন, ‘১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টি রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু হয়। তখন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু সুকেশ রঞ্জন তালুকদার। যখন সরকারিভাবে বিদ্যালয়টির বিল্ডিং বরাদ্দ হয় তখন রেজিষ্ট্রার বিদ্যালয়টির জায়গা কম থাকায় বিল্ডিং পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ব্যপারে প্রধান শিক্ষক গ্রামবাসীকে ডেকে বিষয়টি জানালে বাবু ব্রজগোবিন্দ তালুকদার আরও ৫ শতাংশ জায়গা দান করেন।পরে, বিদ্যালয়ে নতুন স্কুল ভবন বরাদ্দ হয় এবং ভবন তৈরি করা হয়।’ ‘২০০৭ ইংরেজিতে শিক্ষক সুকেশ বাবু অবসরে যান। পরে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পান চিন্তাহরণ চৌধুরী। ২০০৭ সালে নতুন বিল্ডিং-এ ক্লাস শুরু হয়।

পরে, প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে আসেন কাজল কান্তি চৌধুরী। তিনি হঠাৎ মারা গেলে তদবির করে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে পান শৈলেন চন্দ্র তালুকদার।তিনি প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে আসা মাত্রই স্কুুলের খালি ভিটাতে জোরপূর্বক নিজস্ব স্থায়ী ঘর তৈরি করেন।

গ্রামবাসী আপত্তি জানালে তিনি দাপট নিয়ে বলেন, সরকারি জায়গায় ঘর বানালে সরকার নিষেধ করবে, এ বিষয়ে তোমরা কথা বলার কে?’ গ্রামবাসী বলেন,‘বিদ্যালয়ের মোট জমি ৩৮ শতাংশ। স্কুলের বিল্ডিং বাদে, সমস্ত জায়গাই শৈলেন চন্দ্র তালুকদার জোরপূর্বক বিভিন্ন ফসলাদির বাগান করে ভোগদখল করছেন।

আমরা গ্রামবাসী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাপস কুমার রায় বরাবর অভিযোগ করার পর তিনি পরিদর্শন করে সবকিছু দেখে-শুনেও ব্যবস্থা নেননি।এমনকি কয়েক মাস হয় নতুন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুস সালাম যোগদান করেন। তার কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি গ্রামবাসীকে কথা দিয়েছেন বর্ষা গেলে তিনি বিদ্যালয়ের জায়গার ম্যাপ দেখে দখলীয়জমি উদ্ধার করে দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।’ এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে নতুন বরাদ্দকৃত টিউবওয়েলটি স্কুলের নিজস্ব জায়গায় না বসিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব রান্নাঘরের পাশে টিউবওয়েলটি স্থাপন করেছেন। শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের বিরুদ্ধে বদলির আদেশ অমান্য করে স্কুলের হাজিরা খাতায় সাক্ষর, স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা সাক্ষর প্রদানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেন, ‘২০১৯ সালেঅভিযোগের পর ডিপিও জিল্লুর রহমান তাকেশাস্তি স্বরূপ ডেপুটেশন বদলি করে আঁটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েপাঠালে বদলির আদেশ অমান্য করে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের (দীন মোহাম্মদ) সহায়তায় শিবপুর স্কুলেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।’ ‘এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিপিও শিক্ষক শৈলেন তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন এবং বিভাগীয় মামলায় শিক্ষককে তিরস্কার দ-প্রদান করেন।

কিন্তু তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর পর তিরস্কারে দ-িত শিক্ষককে কিভাবেপ্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ গত ৬-৭ বছর ধরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় স্নাতক ডিগ্রীধারী মহিলা বিদ্যুৎসাহী সদস্য পদে অনুমোদন আনার জন্য সুপারিশ করা হয়।

কিন্তু শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদার গ্রামের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে, নিজের স্ত্রীকে (এসএসসি) মহিলা বিদ্যুৎসাহী সদস্য করেন। এ ব্যাপারেঅভিভাবকগণ ডিপিও মোহনলাল বাবু বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।

এ নিয়ে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৬-৭ বার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকেশ রঞ্জন তালুকদার, শিবপুরের বাসিন্দা হিল্লোল সরকার, সুশীল তালুকদার, রাখাল দাশ প্রমুখ।

ফেইসবুক কমেন্ট অপশন
এই বিভাগের আরো খবর
পুরাতন খবর খুঁজতে নিচে ক্লিক করুন


আমাদের ফেসবুক পেইজ