৭:১৩ অপরাহ্ণ

জগন্নাথপুরে নতুন বাঁশের সেতুতে দুই গ্রামবাসীর ভাগ্য বদল, ফের স্কুলমুখি শতাধিক শিক্ষার্থী
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় জগন্নাথপুর ও হাসিমাবাদ গ্রামের বুকচিরে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীতে কোন সেতু না থাকায় যুগযুগ ধরে দুই গ্রামের লোকজন নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন।
একটি মাত্র সেতুর অভাবে বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপার নিয়ে বেশি বেকায়কায় পড়েন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। নদীর পূর্বপ্রান্তে জগন্নাথপুর গ্রামে স্কুল হওয়ায় পশ্চিমপ্রান্তে থাকা হাসিমাবাদ গ্রামের প্রায় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারে না।
এর মধ্যে নৌকাযোগে যাতায়াত করতে গিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী মরতে মরতে বেঁচে ছিলেন। এ ঘটনার পর থেকে হাসিমাবাদ গ্রামের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর স্থানীয় উত্তর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিনা খানম বিষয়টি স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দকে জানান এবং ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের ফের স্কুলে ফেরাতে নলজুর নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ নদীতে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাজেদুল ইসলাম ও জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজুকে জানান এবং জোর দাবি করেন। এ সময় নদীতে পাকা সেতু নির্মাণ সময়ের ব্যাপার হওয়ায় এখনই যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আপাতত বাঁশের সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেন এবং কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনার আলোকে পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ নিজ উদ্যোগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন বাঁশের সেতু নির্মাণ করেন। অবশেষে বাঁশের সেতু পেয়ে ভূক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। যুগযুগ ধরে চলে আসা ভোগান্তির অবসান হয়েছে। জগন্নাথপুর ও হাসিমাবাদ গ্রামবাসীর সেতুবন্ধন হয়েছে। আবারো স্কুলমুখি হয়েছে হাসিমবাদ গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী। নদীর এক পাড়ের মানুষ আরেক পাড়ের বাড়িতে যেখানে মাসে একদিন যাওয়া হতো না। এখন দিনে অনেকবার একে অন্যের বাড়িতে যাতায়াত করছেন। এ যেন নদীপাড়ে রীতিমতো আনন্দ-উৎসব চলছে। ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে সেই দীর্ঘ কাঙ্খিত বাঁশের সেতুটি উদ্বোধনকালে নদীপারে নারী, পুরুষ, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন পেশার জনতার ঢল নামে নদীপাড়ে। তখন সবার মুখে ছিল আনন্দের হাসি। এ সময় নতুন বাঁশের সেতুর উদ্বোধন করেন এবং বক্তব্য রাখেন জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু। বক্তব্য রাখেন, জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র শফিকুল হক, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ, উত্তর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিনা খানম প্রমূখ। এ সময় ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি আবু মিয়া, জগন্নাথপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো.শাহজাহান মিয়া, পৌর যুবলীগ নেতা রাজিব চৌধুরী বাবু, সাংবাদিক আমিনুল হক সিপন সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান শিক্ষক লিনা খানম বলেন, এ নদীতে সেতু না থাকায় আমার স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতো পারতো না। নতুন বাঁশের সেতু হওয়ায় এখন স্কুলে যেতে পারছে। সেই সাথে দুই গ্রামের মানুষের সেতুবন্ধন হয়েছে। এতে আমরা আনন্দিত হয়েছি। পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, নদীতে একটি সেতুর অভাবে যুগযুগ ধরে মানুষ অনেক কষ্ট করেছেন। আর কষ্ট করতে হবে না। আপাতত বাঁশের সেতু হয়েছে। আগামীতে এখানে স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী সহ সকলের কাছে জোর দাবি জানাই। সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র শফিকুল হক বলেন, এখানে অনেক আগেই সেতু হওয়ার কথা ছিল। কেন হয়নি জানি না। তবে এখন আর বিলম্ব না করে দ্রুত পাকা সেতু নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, এখানের আইডি না থাকায় সেতু হয়নি। এখন আইডিতে অন্তর্ভূক্ত করে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, জনভোগান্তি লাঘবে ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে ব্যাহত না হয়, তাই এখানে দ্রত স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে। আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান একজন শিক্ষানুরাগী ও আন্তরিক মানুষ। তিনি দ্রত এখানে পাকা সেতু উপহার দিবেন ইনশাল্লাহ।