৭:১৩ অপরাহ্ণ
গোলাপগঞ্জে পরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ
গোলাপগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় নিহতের ঘটনায় আমাকে পরিকল্পিতভাবে জড়ানো হয়েছে। আমি আগে ইমামতি করতাম। এখন ছোটখাটো ব্যবসা করি। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। পূর্ব শত্রুতার সুযোগে আমাকে এখন হত্যা-মামলার আসামি করা হয়েছে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদম রসুল এলাকার পশ্চিম ধারাবহর গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে মাওলানা আব্দুল কাদির।
লিখিত বক্তব্যের শুরুতে ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গোলাপগঞ্জে গুলিতে ও হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অন্যায়ভাবে আমাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা হচ্ছে। একের পর এক রাজনৈতিক মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি ও মানষিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে রেখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’ তিনি এসব মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের বন্ধের আহ্বান জানান। আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমি মসজিদের একজন ইমাম ছিলাম। দীর্ঘদিন ইমামতি করে জীবন যাপন করে আসছিলাম। এক পর্যায়ে ইমামতি ছেড়ে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না এবং বর্তমানেও আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
তবু আমাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।’ তিনি জানান, ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকাদক্ষিণ বাজার থেকে ফেরার পথে তার ওপর হামলা হয়। পুর্ব বারকোট এলাকার আব্দুস শহীদের ছেলে ইয়াকুব আহমদ, তার সহোদর বিলাল আহমদ, জুবায়ের আহমদ ও কবির আহমদ আমার উপর অর্তকিত হামলা চালায়। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে খালাতো ভাই আব্দুল কাইয়ুম আহত হন।
এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে তদন্ত শেষে বর্তমানে মামলাটি সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ গোলাপগঞ্জ আদালতে বিচারাধীন। তিনি অভিযোগ করেন, আসামি ইয়াকুব আহমদ, তার ভাই বিলাল আহমদ, জুবায়ের আহমদ ও কবির আহমদ মিলে আমার বসত ভিটা জোরপূর্বক দখল করে বাড়ি ছাড়া করার জন্য ঢাকা ও সিলেটের বিভিন্ন থানা এবং আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, ভয়ভীতি দেখাতে আসামিরা বাড়ির আশপাশের রাস্তায় দা নিয়ে রাতের অন্ধকারে বসে থাকে এবং মামলা শেষ হওয়া পরে আমাকে খুন করবে বলে বেড়াচ্ছে।’ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকার পতনের সুযোগে ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পুলিশ-আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিতে ৬ জন নিহত হন এবং অনেকেই আহত হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন।
আন্দোলন চলাকালে আমি আমার বাড়িতে ছিলাম। অথচ, নিহতের ঘটনায় যে সব মামলা হচ্ছে তাতে আমাকে আসামি করা হয়েছে। এতে ইয়াকুব গংদের হাত রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, সম্প্রতি আদালতে নিহত জয় আহমদ হত্যার ঘটনায় মামলা (সিআর ২৯৮/২০২৪) দায়ের করেন নিহতের ভাই মনোয়ার হোসেন। এই মামলা তাকে ৩৪ নম্বর আসামি করা হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি জানতে পেরে যোগাযোগ করলে বাদী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় আমি আব্দুল কাদির সম্পৃক্ত নয় বলে আবেদন করলে ওই মামলা থেকে আমার নাম কর্তন করা হয়। কবির আহমদ গংরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আমাকে হত্যা মামলায় আসামি করেছিলেন বলে পরে জানতে পারি। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা বেগম বাদি হয়ে সিআর/৩১২ নম্বর মামলা দায়ের করলে সেখানেও আমাকে ১০ নং আসামি করা হয়।
একই উপজেলার রণকেলী নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল মুতলিবের ছেলে সিএনজি অটোরিকশা চালক নাজুমুল ইসলামের মাধ্যমে আরেকটি মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। বর্তমানে ওই মামলাটি গোলাপগঞ্জ থানায় রয়েছে। এভাবে কবির গংরা প্রতিপক্ষ ফাঁসাতে এসব রাজনৈতিক মামলায় নাম অন্তর্ভূক্ত করতে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করছেন বলে অভিযোগ তার। আব্দুল কাদির এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্ঠাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বেতন কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন।